রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কোনো টিকিট নেই। তবুও কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। স্টেশনের ভেতরে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। অপরদিকে স্টেশনের বাইরে মো. মুনছুর নামের একজন আনসার সদস্যকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আজ সোমবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিনে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দুপুর থেকে বিকেলে পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা যায়। এদিকে টিকিট ব্যতীত কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য বিমানবন্দর রেলস্টেশনের বাইরে কড়াকড়ি অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে বিমানবন্দর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানবন্দর স্টেশনের বাইরে মো. মুনছুর নামের একজন আনসার সদস্যকে টাকার বিনিময়ে কয়েকজন যাত্রীর কাছে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক যাত্রীকে দেখা যায়, তার কাছ থেকে একশত টাকার বিনিময়ে একটি কম্যুটার ট্রেনের টিকিট কিনেছেন। এ ছাড়া চার শ টাকার বিনিময়ে আরেকজন আরেকটি টিকিট কিনেছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন লোক আমাকে টাকা দিয়েছেন। আমি তার টিকিট কিনে দিয়েছি। তিনি আমাকে ২০ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য টিকিট বিক্রির বিষয়ে অস্বীকার করেন।’
বিমানবন্দরের অগ্রিম টিকিট কাউন্টার থেকে ৫/৭টি লাইন ধরে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য পার্কিং পর্যন্ত চলে গেছেন যাত্রীরা। আবার নগদ টিকিট বিক্রি করার কাউন্টারগুলো রয়েছে বন্ধ। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা ট্রেনের টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না। অনলাইনেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
কাউন্টারের সামনে লেখা রয়েছে, ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা পূর্ব থেকে কাউন্টার থেকে আন্তনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের আসনবিহীন ২৫% টিকিট ইস্যু করা হবে।
কাউন্টারের বুকিং সহকারী মঞ্জুর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সিটের বিপরীতে ২৫% আসনবিহীন টিকিট রয়েছে। তার মধ্যে যেখানে ১০টি টিকিটের মধ্যে আমরা ২/৩টি স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে পারছি। তাও শুধু বিমানবন্দর স্টেশন থেকে।’
প্রবেশ পথে অপেক্ষমাণ কামরুল ইসলাম নামের একজন মধ্যবয়স্ক ব্যবসায়ী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইন কি? আমি তো বুঝি না? স্টেশনে আসছিলাম, কাউন্টার থেকে টিকিট নেওয়ার জন্য। কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় স্টেশনে ঢুকতে পারছি না।’
যানজটের কারণে বিলম্বে এসে ট্রেন মিছ করেছেন এসিআই কোম্পানিতে চাকরি করা মাসুদ রানা বলেন, ‘তেজগাঁও থেকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু লেট করে আসায় ট্রেন মিস করেছি। এখন অনলাইনেও টিকিট পাচ্ছি না, কাউন্টারেও না।’
স্টেশনের ভেতর অন্যান্য ঈদ যাত্রার তুলনায় যাত্রীর চাপ তুলনামূলক চাপ অনেক কম দেখা যায়। যারা টিকিট পেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য স্টেশনে এসেছেন, তাদের চোখেমুখে হাসির ছাপ। এদিকে ট্রেনের টিকিট ছাড়া দুজনকে আটক করে রাখতে দেখা যায় রেলওয়ে পুলিশ সদস্যদের।
আটকৃতরা হলেন— টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে হাবিল উদ্দিন (২৪) ও কুমিল্লার হায়দার রহমানের ছেলে শান্ত ইসলাম। তারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ’ ট্রেনের টিকিট না থাকায় স্টেশনে প্রবেশ করতে পারিনি। পরে হাজী ক্যাম্প রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে স্লো করার পর ট্রেনে উঠে স্টেশনে ঢুকেছি। কিন্তু আমরা ভুল করেছি, আর করব না।’
বিমানবন্দর স্টেশনের আরএনবি’র চিফ ইন্সপেক্টর মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত স্টেশনে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এদিকে বিচ্ছিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ট্রেন ডিলে হয়নি। তা ছাড়াও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন পর্যন্ত আমরা আশঙ্কাও করছি না।’