ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরদিন আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে আজ বুধবার সকালে জনগণের দাবির মুখে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর চাপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম বাবুল নামের ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু পরদিনই (আজ বুধবার) জনগণের চাপের মুখে নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফেসবুক লাইভে তাঁকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম বাবুল আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নিক্সন চৌধুরীর অনুসারী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে শহিদুল ইসলাম বাবুল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় তাঁর পাশে বসা ছিলেন সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনসহ কয়েকজন।
গতকালের ফেসবুক লাইভে শহিদুল ইসলাম বাবুলকে আতঙ্কিত অবস্থায় দেখা গেছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রিয় সদরপুরবাসী, আপনারা জানেন যে আমি ২০১৪ সাল থেকে এমপি মহোদয়ের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমি আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছিলাম। কিন্তু তিনি (এমপি) আমার বাসায় গিয়ে আমার মায়ের হাত ধরে তাঁর বাড়িতে আমাকে নিয়ে এসেছেন এবং আমাকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। আমি তাঁর সম্মানার্থে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালাম এবং এখন থেকে আমি আর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করব না।’
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা শহিদুল ইসলাম বাবুলের বাড়িতে অবস্থান নেন। আজ বুধবার সকালে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন তিনি। তাতে আনন্দিত হয়ে নেতা-কর্মীরা তাঁর নেতৃত্বে বাড়ি থেকে সদরপুর বাজার পর্যন্ত মিছিল করে। এ সময় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।
এ সময় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘আপনারা যে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সেই ভালোবাসায় আমি থাকতে পারলাম না। গতকাল আমি ফেসবুকে লাইভ বলেছিলাম যে, নির্বাচন করব না। কিন্তু আমি আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। জনগণের শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি হতে পারে না। আপনারা আমার ভাই, আমাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা আমাকে দেখে রাখবেন। আমি মাঠে থাকব ইনশা আল্লাহ।’
শহিদুল ইসলাম বাবুলের চাচাতো ভাই ফরহাদ মিয়া গতকাল এক ভিডিও বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি মহোদয় বাবুল ভাইয়ের আম্মাকে দেখার কথা বলে বাড়িতে এসে হাজার হাজার মানুষের সামনে থেকে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যান। তাঁকে অস্ত্রের ভয় দেখানো হয়েছে। এমপির বাড়িতে জোর করে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।’
এসব বিষয়ে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি কেটে দেন। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মিরাজ মাতুব্বর ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপির বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে বলা যাবে যে, এমপি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কিনা।’