হোম > সারা দেশ > ঢাকা

‘ঘুষ’ দেওয়াকে বৈধতা দিয়ে রেজল্যুশন: শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির দুঃখ প্রকাশ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সিমিতি। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে রেজল্যুশন করে নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘ঘুষ’ দেওয়াকে বৈধতা দিয়েছে। ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা-সংক্রান্ত সভার রেজল্যুশনের অংশবিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

গতকাল ১৪ মার্চ ‘‘ঘুষকে’ বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, সমালোচনার ঝড়’ শিরোনামে আজকের পত্রিকার অনলাইনে সংবাদ প্রচার করা হলে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান।

আজ দুপুরের দিকে তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ঐতিহ্যবাহী শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশা আল্লাহ। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত কিছু বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন হওয়ায় ভুল-বোঝাবুঝির কারণে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। সবাই ভালো থাকবেন। পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।’

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ১৫ সদস্যর কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে তা উৎকোচ বা ঘুষ দেওয়ার জন্য নয়। ওটা বিভিন্ন মামলার কোর্ট ফি বাবদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে কষ্ট পেতে পারেন। তাই ফেসবুকের মাধ্যমে সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

৬ মার্চ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত ভাইরাল হওয়া রেজল্যুশনে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা ৬ মার্চ বেলা ২টায় শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে অ্যাড. সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসান।

সভার শুরুতে অ্যাজেন্ডাভিত্তিক আলোচনায় সব সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-২: পেশকার/পিয়নকে সিআর (নালিশি) ফাইলিংয়ে ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৩: যেকোনো দরখাস্তে জিআর/সিআর ১০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৪: জামিননামা দাখিলের খরচ মামলাপ্রতি ১০০ টাকার নিচে না এবং ২০০ টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নম্বর-৫: গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আর কোনো আলোচনা না থাকায় সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে সভাপতি সভার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এই রেজল্যুশনের অংশবিশেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

নাগরিক সমাজ এটাকে ঘুষকে অফিশিয়ালি বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। অথচ এই ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির তার ফেসবুকে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাস হওয়া রেজল্যুশনের অংশবিশেষ পোস্ট করে সেখানে লেখেন, ‘ঘুষের সার্টিফিকেট দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।’

পলাশ খান নামের একজন সভায় পাস হওয়া রেজল্যুশনের অংশবিশেষ ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘এখন আদালতে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন হবে বাহ।’

শাহিন আলম নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর আইডিতে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাস হওয়া ওই রেজল্যুশনের অংশবিশেষ পোস্ট করে লেখেন, ‘অনিয়ম যখন দীর্ঘদিন ধরে চলে, তখন সেটা আইন হয়ে যায়। সেটার প্রমাণ এই মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো। আমাদের সমাজ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম বলেন, ‘শরীয়তপুর কোর্ট-কাচারিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ নেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। কোর্টের কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো যার থেকে যা পারছে আদায় করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, এটা বন্ধ হোক। যেহেতু এটা একবারে হুট করে বন্ধ করা যাবে না, তাই সভায় ঘুষের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে নির্দিষ্ট আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে আমরা কেউ হয়রানির শিকার না হই। ভবিষ্যতে আমরা এই অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করে এ ধরনের অংশবিশেষ রেজল্যুশন ভাইরাল করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এটা নজিরবিহীন। ঘুষকে রেজল্যুশন আকারে বৈধতা দেওয়া হয়, এটা কোনো ইতিহাসে নাই। এটা করে তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও খাটো করেছে। তারা এ কাজটা ঠিক করে নাই। তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই কাজটা কেন করল? ৫ আগস্টের পরে এ ধরনের লেনদেন টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জজ স্যার, চিফ স্যার এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছেন। কোনো ফাইল বা কোনো কাজ আটকে থাকছে না। সকল কাজ যথাসময়ে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের স্টাফদের ঘুষের আওতায় আনা হলো, আমি জানতে চাই।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার বলেন, ‘আমি জানতে পারছি আইনজীবী সমিতি মিটিং করে ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছে, এটা তাদের বিষয়। তারা এ বিষয়ে আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। আমাদের এখানে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না তা-ও আমার জানা নেই। এ রকম যদি কেউ ঘুষ নিয়ে থাকেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্যানেল ১৫টি পদের মধ্যে ১৫টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়।

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

নরসিংদীতে এনজিও কার্যালয়ে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

নরসিংদীতে নিখোঁজের এক দিন পর নারীর লাশ উদ্ধার

শেখ হাসিনা নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছেন: শামা ওবায়েদ

ডিবি পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জে কোটি টাকা ছিনতাই, থানায় অভিযোগ

সুদের বিরুদ্ধে বয়ান নিয়ে উত্তেজনা, বিএনপি নেতাকে দুই দফা পেটালেন ছাত্রদল নেতা

হত্যা মামলায় উত্তরার আমির কমপ্লেক্সের সভাপতি সোবাহান গ্রেপ্তার

কবি নজরুল কলেজে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ

‘ঘুষকে’ বৈধতা দিয়ে রেজল্যুশন: সভাপতি-সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি রোধে বাসচালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ