রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী মা ও ছেলেকে আটকের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়েছেন দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে চিঠিটি পাঠানো হয়। সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে আটক, মুচলেকা নেওয়ার ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
বিশিষ্ট নাগরিকদের চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠুরতা নিষিদ্ধ। যদি আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নাবালক হয়, তবে পুলিশ কর্মকর্তাকে শিশু আইন, ২০১৩ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত বিধান মেনে চলতে হবে। সংবিধানে শিশুদের প্রতি সব ধরনের নিষ্ঠুরতা ও অবমাননাকর শাস্তিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, এভাবে কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার ও আটক করা বেআইনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক কাউকে গ্রেপ্তার করলে তার নিকটের আত্মীয়স্বজনকে জানাতে হবে। কিন্তু কলাবাগান থানা রত্নাকে আটকের পর তাঁর শিশুসন্তানকে আটক করে। সৈয়দা রত্নার সঙ্গে সারা দিন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এটি অনৈতিক ও বেআইনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন—মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সুলতানা কামাল, গণসাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধূরী, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান, নারী পক্ষের শিরীন হক, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির পারভীন হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ডা. মালেকা বানু, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, নিজেরা করির খুশী কবির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরদৌস আজিম, বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির শামসুল হুদা, মানবাধিকার কর্মী রেহনুমা আহমেদ, দৃক পিকচার লাইব্রেরির শহিদুল আলম, বিশিষ্ট আইনজীবী সারা হোসেন, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গ্রীন ভয়েসের আলমগীর কবীর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আরিফ নূর, খেলাঘরের রুনু আলী ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জামসেদ আনোয়ার।
লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিম চিঠিটি গণমাধ্যমে পাঠান।
গত রোববার (২৪ এপ্রিল) মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখেন। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত বৃহস্পতিবার জানান, তেঁতুলতলা মাঠে আর কোনো নির্মাণকাজ হবে না। জায়গাটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।