রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা করবী শিহাব জাহা। পেশায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। করবী কয়েক বছর ধরে শখের বশে বিড়াল পালন করছেন। পাশাপাশি অবহেলিত বা বিপদে থাকা বিড়াল উদ্ধার করেন তিনি। এভাবেই এখন তাঁর বিড়ালের সংখ্যা সাত। এগুলোকে সন্তানের মতো আগলে রাখেন। প্রিয় বিড়ালদের কারণে ঈদের ছুটিতেও দূরে কোথাও যেতে পারেন না।
করবী শিহাব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি শখের বশে তিন বছর আগে বিড়াল পোষা শুরু করি। এরপর আহত ও রাস্তায় পরে থাকা বিড়াল রেসকিউ (উদ্ধার) করে চিকিৎসা করাই। সুস্থ হলে নিজের কাছেই রাখি অথবা কেউ চাইলে পোষার জন্য দেই। এভাবে এখন সব মিলিয়ে আমার সাতটি বিড়াল। সবই দেশি প্রজাতির। আমার বিড়ালদের কথা চিন্তা করে ছুটিতে দূরে কোথাও যাওয়া হয় না। কোথাও গেলেও দিনের মধ্যে ফিরতে হয়। এদের কারণে ছুটিগুলো বাসায়ই কাটে।’
ছুটিতে নিজে ভ্রমণ না করলেও অন্য প্রাণী প্রেমীদের পোষা বিড়াল রেখে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করেছেন এ তরুণী। জানালেন, কয়েক মাস ধরে ‘হ্যাপিলি এভার আফটার ক্যাট বোর্ডিং ফ্যাসিলিটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। এখানে নির্দিষ্ট কিছু টাকার বিনিময়ে নিশ্চিন্তে প্রিয় বিড়ালটি রেখে দূরে ভ্রমণে যেতে পারবেন প্রাণী প্রেমীরা।
ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও পোষা প্রাণীদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা চালু করেছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা। এসব বোর্ডিংয়ে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসকসহ সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে এসব বোর্ডিংয়ে।
এমনই একজন বুশরা সিদ্দীক। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে গড়ে তুলেছেন ‘লিটল উইস্কার ফস্টার হোম’। এখানে শুধু বিড়ালদের থাকার ব্যবস্থা। ২০১৯ সাল থেকে শতাধিক বিড়াল রেখেছেন এই আবাসিক হোটেলে।
ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে বুকিং নেওয়া শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বুশরা বলেন, ‘আমার এখানে বিড়াল রাখতে হলে আগে থেকে বুকিং দিতে হয়। আমার হাউসের ধারণক্ষমতা ১৫টি। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যেই বুকিং শেষ হয়ে গেছে। বিড়ালের খাবারসহ অগ্রিম টাকা ও বিড়ালের মালিকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিয়ে বুকিং করতে হয়। প্রতিটি বিড়ালের জন্য দিনে ৪০০ টাকা দিতে হয়।’
তবে অন্যের পোষা বিড়ালের জন্য ফস্টার হাউস খোলার কিছু ঝক্কিও আছেন বলে জানালেন এ প্রাণীপ্রেমি। তিনি বলেন, একটি বিড়াল ফস্টার হাউসে রাখতে হলে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। কারণ অনেক সময় বিড়াল দিয়ে যাওয়ার পরে আর অনেকে নিতে আসেন না।
প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক তোয়া নূর রাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আয়ের পাশাপাশি পোষা প্রাণীটি নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, পরিচর্যার লোকসহ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি বিড়াল ও কুকুরের জন্য আলাদা কেবিন রয়েছে। সব কেবিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে আমরা ১৫টির বেশি রাখতে পারছি না। ঈদের ছুটি উপলক্ষে বুকিং নেওয়া শেষ। আমরা ভবিষ্যতের জন্য বড় প্ল্যান করছি। পোষা প্রাণীর নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে চাই।’
পোষা প্রাণীর এমন আবাসিক হোটেল গড়ে ওঠার বিষয়ে কিছু ঝুঁকি ও নেতিবাচক বিষয়ের কথাও স্মরণ করিয়ে দিলেন রবিনহুড: দ্য অ্যানিমেল রেসকিউ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আফজাল খান।
আফজাল খান বলেন, ‘বিদেশে আমরা দেখি এই ধরনের হাউসে প্রশিক্ষিত লোকজন থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটা নেই। বর্তমানে কিছু মানুষ এটাকে ব্যবসা করে। তারা একটি হাউস খুলে রং টং দিয়ে জাঁকজমক করে দিনে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বিল করে।’