আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
‘আমার স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আর তাঁর টাকা এভাবে আটকে রাখা হয়েছে! আমি বাসা ছেড়ে এখন অন্যের বাসায় থাকি, ছোট্ট মেয়ে নিয়ে আমি কোথায় যাব?’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভের সময় নিহত নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানার আর্তি এটি। পুলিশের ভাষ্য ও পরিবারের ধারণা, নাজমুলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নাজমুলসহ নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে অর্থসহযোগিতা দেওয়া হয়। তবে অন্যরা সবাই এ অঙ্কের সঞ্চয়পত্র বুঝে পেলেও স্থগিত করা হয়েছে নাজমুলের স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেও কার্যকর সহযোগিতা বা সদুত্তর পাননি মারিয়া সুলতানা।
আজকের পত্রিকাকে মারিয়া সুলতানা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের চিঠি পাওয়ার পর তিনি সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে এনআইডি নিয়ে পরে যেতে বলে। এরপর আন্দোলন ক্রমেই তীব্রতর হওয়ায় মারিয়া এনআইডি সংগ্রহ করতে পারেননি। কার্ড সংগ্রহ করে আগস্টের শেষ দিকে ব্যাংকে গেলে বলা হয়, তাঁর সঞ্চয়পত্রটি সরকারি নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতনদের অনুমোদন নিতে হবে।
মারিয়া সুলতানা বলেন, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতনদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে এ বিষয়ে তাঁরা সমাধান দিতে পারবেন। এরপর তিনি নিজেও কয়েকজন সমন্বয়ক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে এ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
কেমিক্যালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিহত নাজমুল কাজী স্ত্রী ও দুই বছরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় একটি ভাড়াবাসায় থাকতেন। নিজের বাসার কাছাকাছি আন্দোলনকারীদের পানি পান করাতে গিয়ে নিহত হন তিনি।
নাজমুলের লাশের পুলিশি সুরতহাল প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুযায়ী, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মারিয়া মনে করেন, তৎকালীন সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাই তাঁর স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেন। মারিয়া জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন বা অন্য কোনো উৎস থেকে এ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি। অর্থসংকটে আগের ভাড়া বাসা ছেড়ে বোনের বাসায় উঠেছেন।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখার উপমহাব্যবস্থাপক আকলিমা ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৩৪ জনের মধ্যে ৩৩ জনের সঞ্চয়পত্র হয়ে গেছে। তাঁদের অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পেলেও তাঁদের প্রক্রিয়া স্থগিতের আগেই শুরু হয়েছিল। নাজমুলের স্ত্রী এনআইডি দিতে অনেক দেরি করায় তাঁরটা স্থগিত হয়ে যায়। এখন সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিলে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে ব্যাংকের কিছু করার নেই।’