রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বছিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় সন্ধ্যায় সশস্ত্র মহড়া ও পরপর বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
ছিনতাইকারীরা পথচারীদের মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাইসহ রাস্তার পাশের ১৫ থেকে ২০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এই ঘটনার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। তবে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।
আজকের পত্রিকার হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বছিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকার ডি-ব্লকের ২ নম্বর রোড ধরে সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিটের দিকে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল হেঁটে যাচ্ছে। সঙ্গে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দলের সবার হাতে ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ বছর। দলটি সামনে যাকে পাচ্ছে তার কাছ থেকেই টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছিলা গার্ডেন হাউজিং এলাকায় ছিনতাই নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে গতকাল সন্ধ্যার ঘটনাটি অভূতপূর্ব। তাঁরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল অস্ত্র হাতে বছিলা বাজারের সামনে থেকে ছিনতাই শুরু করে। মহড়া ও ছিনতাই শেষ হয় অন্তত দুই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায়। এর মধ্যে পথচারী, নদীর পাশের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা দর্শনার্থীদের মোবাইল ফোন ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
আজ শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলার শিকার অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছেন। হামলার শিকার বেশির ভাগই পথচারী ও ছুটির দিনে নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা লোকজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আজ বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায় ঘুরে অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন পাবনা থেকে কাজের সন্ধানে তিন দিন আগেই বছিলা হাউজিং আসা রংমিস্ত্রি নীরব প্রামাণিক ও তাঁর বন্ধু।
নির্মাণশ্রমিক জাহিদুল ইসলামসহ আরও দুজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইকারীরা জাহিদের মাথায় কোপ দিয়েছে। পরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নুসরাত আফরিন।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানার সামনে দেখা যায়। এ সময় তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল আমি বাসার পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে যাই। হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। গলায় অস্ত্র ধরে বলে, মোবাইল ফোন আর টাকা দিতে। পরে একজন আমার ব্যাগ খুলে মোবাইল নিয়ে যায়। কিন্তু টাকা না থাকায় আমার শরীরে তল্লাশি করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আমার পা ও পিঠে অনেকগুলো আঘাত করে। মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পর একজন এসে লক খুলে দিতে বলে। তখন আমি দৌড় দিলে, আমার কপালে ও হাতে কোপ দেয়। এখন থানায় এসেছি অভিযোগ দিতে।’
ছিনতাইয়ের শিকার আরিফুর রহমান নামে এক দোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার দোকানের ক্যাশ বক্স থেকে ৭ হাজার নগদ, এক কেস পানির বোতলসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমার ক্ষতি অন্তত ১২ হাজার টাকা। অস্ত্রের মুখে দোকানে সামনে বসা এক কাস্টমার ও আমার ভাগনের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে গেছে।’
এ ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে আজ বিকেলে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হককে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি।
পরে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টা আমার জানা নেই। আমরা কোনো কিছু এড়িয়ে যেতে চাই না। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। কেউ ছাড় পাবে না।’