গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধদের স্বজনদের সময় কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়। প্রিয় মানুষটি বেঁচে ফিরবে—এমন প্রার্থনায় তাঁরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছয়তলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করছেন। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, গতকাল বুধবারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন।
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ছয়তলায় গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরে বিস্ফোরণে দগ্ধদের স্বজনেরা কেউ কাঁদছেন নীরবে, কেউ ওয়ার্ডের দরজার দিকে অপলক তাকিয়ে।
ষষ্ঠতলার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের দরজার সামনে দেখা যায়, শরীরে সুরক্ষা পোশাক জড়িয়ে অনূর্ধ্ব ৪০ বছরের এক নারী দাঁড়িয়ে আছেন। দরজার স্বচ্ছ কাচের ভেতর দিয়ে ভয়ার্ত চোখে ওয়ার্ডের ভেতরে দেখার চেষ্টা করছেন। উচ্চতা কম হওয়ায় খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না। তবে ভেতরে দেখতে না পারায় ছটফট করছিলেন। নিচু স্বরে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘সেই কহুন আইছি। এহুনো ভেতরে যাইবার দেয় না।’ মিনিট দু-এক পরেই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হলো তাঁর। চোখের পলকে পায়ের জুতা জোড়া খুলে বিদ্যুৎবেগে ঢুকে গেলেন ভেতরে। বেরিয়ে এলেন আধা ঘণ্টা পরে।
দগ্ধ সুলেমানের অবস্থা জানতে চাইলে এই নারী বলেন, ‘অবস্থা ভালো না বাজান। এহন কী দিয়া কী করমু বুইজতাছি না। মানুষটার এক পা খাটো। আগুনে পুইড়া হেইডা আরও খাটো হয়া গেছে। দেহার মতো অবস্থা নাই।’
শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সুলেমান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে জীবিকার তাগিদে গাজীপুর এসেছিলেন। নিজে করতেন ভাঙারির ব্যবসা, স্ত্রী শাপলা করতেন একটি পোশাক কারখানায় কাজ, সঙ্গে ছিল এক ছেলে। সেও কোনো একটা পোশাক কারখানায় কাজ করে। ভালো থাকার আশায় এসে এক অথই সাগরে পড়ল পরিবারটি।
গাজীপুরের ঘটনায় ২৫ জন দগ্ধ এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁদের অন্তত ৪০ জন স্বজন ওয়ার্ডের সামনে অপেক্ষা করছেন। সবার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। চোখে-মুখে রাজ্যের দুশ্চিন্তা।
২২ বছর বয়সী লাদেনের শরীরের ৮৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তাঁর মুখও পুড়ে গেছে। জামালপুরের এই গার্মেন্টসকর্মীর অবস্থাও ভালো না—দেখে এসে জানান তাঁর খালাতো ভাই মো. সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা তেমন ভালো না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দগ্ধ হয়েছেন তিনি। তিন বছরের একটা ছোট ছেলেসন্তান আছে। যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে পরিবারের যে কী হবে।
ওয়ার্ডের সামনে শোকে পাথর হয়ে বসেছিলেন নাজমা বেগম। ভেতরে তাঁর স্বামী কুদ্দুস চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়েছে। খুব বেশি কিছু বলেননি এই নারী। শুধু বললেন, ‘আমার স্বামীর পোড়া শরীর দেইখা আমি অজ্ঞান হয়া গেছিলাম।’
উল্লেখ্য, গাজীপুরের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৪ জন নারী, শিশু ও পুরুষ দগ্ধ হয়েছেন।