লিবিয়ায় এক বছর ধরে নিখোঁজ শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২৪ যুবককে পাচারকারী দালাল চক্রের হোতা রাশেদ খানকে চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তন্ময় গাইন এই আদেশ দেন।
এ দিকে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তাঁর ফাঁসির দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে আমরণ অনশনে বসেন নিখোঁজ ২৪ যুবকের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। শনি ও রোববার অনশন শেষে আজ সোমবার সকালে তাঁরা দালালদের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
শুক্রবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে। পরে শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের চরযাদবপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে রাশেদ খান ও কামরুজ্জামান টুনু খান বিভিন্ন দেশে জনশক্তি পাঠানোর কাজ করেন। তাঁরা নিজেরা এবং সহযোগীদের মাধ্যমে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে পাঠান।
২০২৩ সালে তাঁরা শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া, দক্ষিণ ভাসানচর, নতুন হাট, চরনেয়ামতপুর, চর ভাসানচর, চাপাতলী, চরচাটাং এলাকার ১৯ জন ও মাদারীপুর সদরের জাগীর, জাফরাবাদ, ত্রিভাগাদি, কালকিনির সূর্যমণি এলাকার ৫ জনসহ মোট ২৪ যুবককে অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যান রাশেদ ও কামরুজ্জামান টুনু খানসহ একটি মানব পাচারকারী দালাল চক্র। তাঁদের প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তারপর মিসর হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়। এর পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে ওই ২৪ যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মানব পাচারের ৫৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি মামলা তদন্ত করছে জেলা পুলিশ, সিআইডিতে তদন্তাধীন ২০টি মামলা। এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা ২৬০ জন। এর মধ্যে ২৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে এবং দুটি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে।
শরীয়তপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক শিমুল সরকার বলেন, মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা রাশেদ খানকে আজ আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চক্রের হোতা রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।