এম শহিদুল ইসলাম
বাসাইল (টাঙ্গাইল) : শুভ হোসেন জয়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের আইসড়া গ্রামের অটোরিকশা চালক বাবুল হোসেনের ছেলে। মা জিয়াসমিন আক্তার একজন গৃহিণী। জয় গ্রামের আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শুভ সবার ছোট। তার বড় দুই বোন শিফা আক্তার ও স্বপ্না আক্তার। শিফা দশম ও স্বপ্না অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
জয় ঘুড়ি তৈরি করতে পছন্দ করে। ঘুড়ি বিক্রি করে প্রাইভেট পড়ার খরচ জোগায় সে। তার স্বপ্ন– লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হবে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লেখাপড়া এমনকি নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ভুলে ইন্টারনেটে ভিডিও এবং মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে ।
সমবয়সী সহপাঠীরা যখন মোবাইলে গেমস খেলায় মত্ত, তখন পড়ার টেবিলে পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে সখ্য শুভর। নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে বাঁশের কাঠি আর রং-বেরংয়ের পলিথিন দিয়ে তৈরি করে ঘুড়ি। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে শিশু–কিশোরদের মাঝে বিক্রি করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করছে সে। আবার এ টাকা খরচ না করে মায়ের কাছে জমা করে।
ঘুড্ডি বানানোর কাজে দশম ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার দুই বোন শিফা ও স্বপ্না তাকে সহযোগিতা করে বলেও জানায় জয়। তার স্বপ্ন বড় হয়ে সে ইঞ্জিনিয়ার হবে।
জয়ের বোন শিফা ও স্বপ্না বলেন, আমরা দুই বোন, এক ভাই। সব সময় বন্ধুর মতই থাকি। আমার ভাই জয় বিভিন্ন ধরনের ঘুড্ডি বানাতে পছন্দ করে। তার বানানো ঘুড্ডির চাহিদা অনেক। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমরাও তাকে এ কাজে সাহায্য করি।
জয়ের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা নিজ ইচ্ছাই লেখাপড়া করে। আল্লাহর রহমতে ছাত্রও ভালো। কখনো লেখাপড়া করার জন্য তাগাদা দিতে হয় না। দেখা যায় রাস্তা ঘাটে, দোকানপাটে, বাঁশতলায়, গাছতলায় অন্যান্য ছেলেরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইল গেমসহ নানা খেলায় ব্যস্ত থাকে। অভিভাবকেরা তাদের ছেলেদের নিয়ে অনেক চিন্তিত। আল্লাহ রহমতে আমার ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সুখী। আমার রোজগার দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। ঠিকমতো প্রাইভেট পড়ার খরচ দিতে পারি না। ছেলেই ঘুড্ডি বানিয়ে বেঁচে খরচ চালায়। স্কুল বন্ধ থাকলেও আমার ছেলে কোন বাজে নেশা নেই। আমি গর্বিত আমার ছেলেকে নিয়ে। আমার ছেলেমেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
জয়ের শিক্ষক সৈয়দ জামান বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সহপাঠীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল গেমসের আড্ডায় না জড়িয়ে তার কর্মস্পৃহা সত্যিই প্রশংসনীয়।