মাদারীপুর প্রতিনিধি
নির্মাণের পাঁচ বছর পার হলেও চালু হয়নি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পৌর বাস টার্মিনাল। বিভিন্ন গন্তব্যমুখী যাত্রীরা মহাসড়কের ওপর ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠা-নামা করছেন। যানবাহনের চালকেরা ও যাত্রীরা দ্রুত বাস টার্মিনাল চালুর দাবি জানিয়েছেন।
পৌর বাস টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ১ একর ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে পৌর বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বাসস্ট্যান্ডটি কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকার মজিদবাড়ি মৌজায় নির্মাণ করা হয়। পরের বছর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কাজের সব টাকা তুলে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজান এন্টারপ্রাইজ। এরপর পাঁচ বছর চলে গেলেও এখনো বাস টার্মিনাল চালু করা হয়নি। ফলে সন্ধ্যা হলেই এলাকাটি মাদকসেবী আর বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। অপরদিকে, ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।
সরেজমিনে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। কালকিনির ভুরঘাটা এলাকার বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে ওই এলাকায় ভিড় থাকায় যানবাহন থেকে ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা ওঠা-নামা করছেন। বাস থামলে যাত্রীরা দৌড়ে বা চলন্ত বাসের পাশ কাটিয়ে ঝুঁকি নিয়েই উঠতে হচ্ছে। তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে কালকিনি ভুরঘাটায় পৌর বাস টার্মিনালটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন যাত্রী, চালক ও স্থানীয়রা।
বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সোনারতরি বাসের যাত্রী আফিয়া বেগম, কামাল হোসেন, আসমা বেগম ও কালকিনির যাত্রী মিনহাস হোসেন জানান, কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যানজট লেগেই থাকে। তা ছাড়া মহাসড়কের ওপরে দাঁড়িয়েই যাত্রীদের বাসে উঠতে হয় আবার নামতে হয়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে পৌর বাস টার্মিনালটি দ্রুত চালুর দাবি জানাই।
সাকুরা পরিবহনের চালক মো. মামুন বলেন, মহাসড়কের মধ্যেই আমাদের যাত্রী ওঠা-নামা করাতে হচ্ছে। এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে। এ জন্য সবার উপকারের কথা চিন্তা করে বাস টার্মিনালটি চালুর দাবি জানাই।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে বাস টার্মিনালটি দ্রুত চালু করা দরকার। কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পরেও চালু না হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। তা ছাড়া এখানে নিরিবিলি থাকায় বখাটেরা আড্ডা দেয় আর মাদক সেবন করে। এতে সামাজিক পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘কেন চালু করা সম্ভব হয়নি, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে এখন বাস টার্মিনালের কিছু কাউন্টার করতে হবে। এ বিষয়ে আমি সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে কাউন্টারগুলো করব। এরপর টার্মিনাল চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, কালকিনি পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার সময় পরিকল্পনার অভাব ছিল। সেখানে কাউন্টার প্রয়োজন অন্তত ৩০টি, কিন্তু নির্মাণের সময় বাস কাউন্টার তৈরি করেছে মাত্র ৭টি। বিপুলসংখ্যক কাউন্টার না থাকায় এটি চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে। বাস টার্মিনালটি শিগগির চালুর জন্য কালকিনি পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। আশা করছি দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে।