ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনে বাংলাদেশি এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম সজিব সরদার (২৮)। তিনি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল বুধবার রাতে সজিব মারা যান। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছায়।
এদিকে মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায় চক্রের হাতে বন্দী রয়েছেন সজিবের আরেক ভাই রাকিব সরদার (২৫)। তাঁরা পরস্পর আপন চাচাতো ভাই। নিহত সজিব সরদার জেলার শিবচরের নিলখী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের চান মিয়া সরদারের ছেলে।
জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার জন্য চার মাস আগে বাড়ি ছাড়েন সজিব ও তাঁর চাচাতো ভাই রাকিব। স্থানীয় দালাল বোরহান ব্যাপারীর মাধ্যমে প্রথমে লিবিয়ায় পৌঁছান তাঁরা। লিবিয়ায় যাওয়ার পর দালাল চক্রের হাত বদল হয়। বন্দী হন মাফিয়াদের হাতে। এরপর থেকে চলে নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও বাড়িতে পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। লিবিয়ার বন্দিশালায় পালাক্রমে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন সজিব ও রাকিব। একপর্যায়ে সজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লিবিয়ায় থাকা আরেক দালালের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে গতকাল রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহতের স্বজনেরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার দালাল বোরহান ব্যাপারী প্রথমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে সজিবকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেন। সেখান থেকে সরাসরি ইতালি নেওয়ার জন্য আরেক চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। চক্রটি বন্দিশালায় আটকে মুক্তিপণের জন্য সজিবকে নির্যাতন শুরু করে। এরপর এই চক্রের কাছ থেকে ছাড়ানোর কথা বলে আরও ২৫ লাখ টাকা আদায় করেন বোরহান ব্যাপারী। এরই মধ্যে আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় সজিবকে। মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র।
গতকাল সজিবের অবস্থা খারাপ দেখে মাফিয়ারা লিবিয়ায় থাকা বাংলাদেশি এক দালালের কাছে পৌঁছে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে সেখান থেকে লিবিয়ায় থাকা পরিচিত কয়েক ব্যক্তি সজিবকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। গতকাল বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সজিবের বাবা চানমিয়া সরদার বলেন, ‘আমার ছেলেকে দালাল বোরহান ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যান। সেখানে বিক্রি করে দেন। চার মাস আটকে রেখে মারধর করেন। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। মারধর করেন। আমার ছেলেটা গতকাল মরে গেছে।’
সজিবের বোন শামীমা আক্তার বলেন, ‘দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েও ভাই সজিবকে বাঁচাতে পারলাম না। ভাইয়ের জন্য জমিজমা সব বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ভাইয়ের লাশ যেন বাড়ি আসে। আর দালাল বোরহানের ফাঁসি চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে বোরহান ব্যাপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে গ্রাম থেকে যুবকদের সংগ্রহ করেন তিনি।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, ‘বিষয়টি মর্মান্তিক। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। লিবিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’