রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের কাজ বন্ধের জন্য আন্দোলনকারী পরিবেশবাদী দুই সংগঠনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’ সংগঠন এবং ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’-এর মধ্যে এই মারামারি হয়।
এতে যোগ দেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে এতে কেউ গুরুতর আহত হননি।
সরেজমিন দেখা যায়, আজ বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেটে (তেজগাঁও কলেজের উল্টো দিকে) অবস্থিত আনোয়ারা পার্কের সামনে আনোয়ারা পার্ক-পান্থকুঞ্জ পার্ক, তাজউদ্দীন আহমদ পার্ক ও ওসমানী উদ্যান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জড়ো হন।
সেখানে সবার বক্তব্য দেওয়া শেষে আনোয়ারা পার্ক থেকে পান্থকুঞ্জ পার্ক পর্যন্ত লংমার্চের যান তারা। লংমার্চ নিয়ে পান্থকুঞ্জ পার্কে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের লোকজন তাদের ওখানে সমাবেশ করতে বাধা দেয়।
এ সময় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলতে থাকেন, ‘আমরা এখানে ২১ দিন যাবৎ অবস্থান করছি এত দিন আপনারা কোথায় ছিলেন?’
আমিরুল রাজিব মাইক নিয়ে বলেন, ‘বাপার সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিবের নকশায় পান্থকুঞ্জ পার্কের বর্তমানে এমন অবস্থা। সে কোথায়? তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আপনারা কেন ২১ দিন পর লোক দেখানোর জন্য এখানে এসেছেন? টাকা দিয়ে লোকজন জোগাড় করে কেন আসছেন এখানে?’
আমিরুল রাজিবের এসব কথা বলার পর বাপাসহ অন্য আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমিরুল রাজিবের সংগঠনের ওপর হামলা করেন। এতে দুই পক্ষের মারামারি শুরু হয়। কয়েক দফায় মারামারি চলে। একপর্যায়ে সেখানকার কার্যক্রম শেষ ঘোষণা করেন বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার।
সেখানে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘আজকে নতুন নয়, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ২০০২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছে। লংমার্চ নিয়ে এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নানান ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেন। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ আমরা নাকি এখানে ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে এসেছি।’
পরে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী ঘটনা ঘটেছে সেটি তো আপনারই দেখেছেন। আমরা এখানে ২১ দিন আছি। এই ২১ দিনে বাপাসহ কেউ আসেনি। এই প্রকল্পটা বাপার সহসভাপতি ইকবাল হাবিবের নকশা করা। আমরা এটি নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রশ্ন তুলেছি। বাপার কিছু প্রবীণ গ্রহণযোগ্য লোকজনের সঙ্গে কিছু লোক মিশ্রণ করে এনে ইকবাল হাবিবের প্রকল্পের বিরুদ্ধে আমরা প্রশ্ন তুলেছি বলে আমাদের আক্রমণ করেছেন।’
বাংলাদেশে পরিবেশ নিয়ে নৈরাজ্য হয়েছে এবং পরিবেশবাদীদের একটি অংশ লুণ্ঠন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আনোয়ারা উদ্যান বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৫ তারিখে অবমুক্ত হবে উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন। তো ঘোষণা দেওয়ার পর কীসের আন্দোলন?’ বাপা, গ্রিন ভয়েসসহ পরিবেশ সংগঠন করার সব এনজিওর টাকার উৎসহ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে আনোয়ারা পার্কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, উন্নয়নের নামে ঢাকার পার্কগুলো জাঁতাকলে বন্দী। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উন্নয়নের নামে পার্কে কোনো স্থাপনা করা যাবে না।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘গাছ জীবনের উৎস। গাছ না থাকলে আমরা বাঁচব না। ঢাকায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার কোনো স্থান নেই। ঢাকার বিভিন্ন মাঠগুলো ব্যবসায়ীরা দখল করে নিচ্ছে। কনস্ট্রাকশনের নামে পার্কগুলো যেন বন্ধ না হয়।’ সবার জন্য পার্কগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক ফাতেমা ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আনোয়ারা পার্ক অনেকটা নষ্ট হয়েছে। এখন শুনছি বাকি জায়গায় শপিং কমপ্লেক্স করার হবে। এটি আমরা ভালোভাবে দেখছি না। বাকি অংশটুকু অন্য কোনো কাজে ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না। আমরা এখানে বাকি অংশে আগের মতো বনায়ন ও সুন্দর পরিবেশ চাই।’
সেখানে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির, সহসভাপতি ড. মো. খালেকুজ্জামান, তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক নওরিন সাজ্জাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।