রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ব্যাটারিচালিত এক অটোরিকশা চালককে খুন করে রিকশা ছিনিয়ে নেয় কাভার্ডভ্যান চালকের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক ছিনতাইকারী চক্র। হত্যাকাণ্ড ও ছিনতাইয়ের প্রায় এক মাস পর ওই কাভার্ডভ্যান চালকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রামপুরা থানা-পুলিশ।
গত ৮ এপ্রিল রাতে অটোরিকশা চালক শাহ আলম মিয়া রামপুরা থেকে নিখোঁজ হন। এরপর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে রামপুরা থানা-পুলিশ। ঘটনার এক প্রায় মাসের মাথায় গত ৪ মে রাজধানীর মুগদা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ছিনতাই চক্রের মূল হোতা ও কাভার্ডভ্যান চালাক মো. শরীফুল ইসলাম ও তার অন্যতম সহযোগী চান্দু এবং চোরাই রিকশা বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ফুল মিয়া ও মো. আল আমিন (৩৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি চোরাই রিকশা উদ্ধার করা হয়।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অটোরিকশা ছিনতাই করে চক্রের মূল হোতা শরীফুল ইসলাম। তিনি পেশায় কাভার্ডভ্যান চালক। ৯ মাস আগে তিনি যে কাভার্ডভ্যান চালাতেন সেটি মালিক বিক্রি করে দেওয়ায় বেকার হয়ে যান। এরপর একজনের মাধ্যমে অটোরিকশা চুরি শেখেন। শরীফুলের চক্রে আরও তিনজন রয়েছেন। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৪টি রিকশা ছিনতাই করত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ এপ্রিল রাতে বনশ্রী এলাকা থেকে শাহ আলমের রিকশায় তারা যাত্রী সেজে ওঠেন। চালককে অজ্ঞান ও শ্বাসরোধ করে অচেতন করে। এরপর অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। স্বজনরা শাহ আলমকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ এপ্রিল তিনি মারা যান।
এই ঘটনায় নিহতের ছেলে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকার শতাধিক সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এ বিশ্লেষণ করা হয়। অজ্ঞান পার্টির মূল হোতা শরীফুল ইসলাম তার সহযোগী চান্দু ও শাহাবুদ্দিনকে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে গতকাল শনিবার ৪ এপ্রিল রাতে মুগদা থানার মানিকনগর এলাকা অভিযান চালিয়ে শরীফুল ও চান্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই অটোরিকশা কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ফুল মিয়া ও আল আমিনকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে সাতটি চোরাই অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার শরীফুল প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে গত ৯ মাসে শতাধিক রিকশা চুরি করেছে। এমনকি শাহ আলমের রিকশা ছিনতাই করার পরেও অন্তত ৯টি অটোরিকশা ছিনতাই করেছে। এই সকল রিকশা তারা ফুল মিয়া ও অপর একটি চক্রের কাছে বিক্রি করত।
ডিসি হায়াতুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চোরাই রিকশা কেনার সঙ্গে জড়িত একটি গ্রুপের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরও একটি গ্রুপকে গ্রেপ্তার মিরপুরে আমাদের অভিযান চলছে। শরীফুলের পলাতক এক সহযোগীকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। রিকশা চালকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু খাবেন না। তাহলেই আপনাদের গাড়ি লুট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’