রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলন ও জমিতে পোকার আক্রমণে নরসিংদীর রায়পুরা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। পাইকারি ২৫০-৩০০ ও খুচরা ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, আন্দোলনের সময় অন্যান্য জেলা থেকে কাঁচা মরিচ সরবরাহ না আসা ও খেতে পোকার আক্রমণে জোগান কমেছে। এতে কাঁচা মরিচের দাম কমেছে।
কৃষকেরা বলছেন, জমিতে পাতা কোঁকড়ানোসহ নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় খরচ উঠবে কি না এ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মরিচখেতে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা জমিতে সার, কীটনাশক ছিটানোসহ নিড়ানি দিয়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত।
এ সময় কথা হয় চাষি আইনুল হক মুন্সির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কী করবেন ছবি তোলে? এই গরম রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষাবাদে লোকসান। সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই না। আমাগো নিয়া কেউ চিন্তা করে না। মরিচখেতে কী রোগ যে আইলো, যে যা বলে সেই মতেই সার–কীটনাশক দিচ্ছি মরিচগাছের পাতা কোঁকড়ানো রোগের কোনো কাজ হচ্ছে না।’
আইনুল হক মুন্সি আরও বলেন, ‘বাজারে দাম বেশি হলে লাভ কী? গাছে ফলন নাই। গত বছর মরিচ চাষ করে লোকসানে পড়ি। লাভের আশায় এ বছরেও ১৭ শতক জমিতে চাষ করে খরচ হয়েছে ১৫-১৭ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছি। যে অবস্থা মনে হচ্ছে এ বছরেও লোকসানেই পড়তে হবে। এই মৌসুমে আর মরিচ চাষ করব না। অনেকে চাষে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
অপর এক চাষি বাছেদ মিয়া সার–কীটনাশক ছিটানোর সময় বলেন, ‘এই এলাকায় বেশ কয়েকজন চাষি প্রতিবছর ভালো দামের আশায় মরিচ চাষ করে আসছে। এ বছর ১৮ শতক জমিতে চাষ করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছি। আজ বাজারে ৪ কেজি মরিচ ১ হাজার টাকা বিক্রি করে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকার মতো। দাম বেশি হলেও লাভ কী রোগের কারণে মরিচ নাই। খরচ ওঠাতেই চিন্তিত।’
‘আমার মতো এক বিঘার মতো জমি করা মো. হানিফ মিয়া ও আলমগীর হোসেনসহ আরও অনেকের একই হাল।’ যুক্ত করেন বাছেদ মিয়া।
আসাদ মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর দেড়-দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করি। মরিচখেতে রোগের কারণে ফলন নাই বললেই চলে। উৎপাদন কমের পাশাপাশি সার কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের যে দাম তাতে বেশ লোকসানে পড়তে হবে।’
সবজি বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, ‘বাজারে মরিচের কম, বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। আমাদের লাভ সীমিত। খুচরা বাজারে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
মুছাপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘অতিবৃষ্টি ও খরায় পাতা কোঁকড়ানো রোগে মরিচখেতে ক্ষতি হয়ে থাকে। কৃষকদের মধ্যে ফসল রক্ষার জন্য সর্বাত্মক পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় বেশির ভাগ মুছাপুর ইউনিয়নের চাষিরা চাষাবাদ করে আসছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১০৬ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষাবাদ হয়েছে। মরিচখেতে পোকা-মাকড়ের কারণে পাতা কোঁকড়ানো রোগ বেশি দেখা যায়। জমিতে ফেরোমন ফাঁদ ও পোকা-মাকড়নাশক কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’