‘ইচ্ছা থাকলেও আগের মতো হালুয়া, রুটি বানানো হয় না। খাওয়ানোর তো মানুষ পাই না। পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজন যে যার মতো ব্যস্ত। শবে বরাতের ছুটিতেও কেউ কারও বাসায় আসে না, কারও বাসায় কেউ কিছু পাঠায়ও না’, বলছিলেন রাজধানীর আদাবরের গৃহিণী নাসিমা আক্তার।
ষাটোর্ধ্ব এই নারী জানান, ছেলে, বউ, নাতি নিয়ে তাঁর পরিবারে পাঁচ সদস্য। ছোট বেলা থেকে তিনি দেখে এসেছেন শবে বরাতে বাসায় বাসায় রুটি হালুয়া, মাংসসহ নানা রকমের খাবার রান্না হয়। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় সেগুলো পাঠানো হয়। কিন্তু এই রেওয়াজ কাটছাঁট হতে হতে বছর তিনেক ধরে একেবারে হারিয়েই গেছে।
একই ধরনের কথা জানালেন মিরপুরের বাসিন্দা শিরিন মনোয়ার। শবে বরাতে তাঁদের বাসাতেও বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই নারী বলেন, ‘সারা সপ্তাহ অফিস-বাসা করতে করতে জীবন শেষ। দু-এক দিন যা ছুটি মেলে, বাসায় বসে একটু রেস্ট নেওয়া ছাড়া বাড়তি কিছু করার ইচ্ছা হয় না।’
ঘরে ঘরে রুটি-হালুয়া তৈরি করে অন্যদের মধ্যে বিলানোর সংস্কৃতির এই খরায় জমে উঠেছে রাজধানীর দোকানগুলো। নাগরিক ব্যস্ততার কারণে নিজে তৈরি করতে না পারলেও দোকান থেকে কিনে এনে সপরিবারে হালুয়া-রুটি খাওয়ার একটা চল জারি আছে।
রাজধানীর শংকরে আবদুস সালাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর শবে বরাতে বেচাকেনা কম ছিল। এবার মনে হইতেছে করোনারে হারাইয়া ভয়ডরহীনভাবে সবাই কেনাকাটা করতেছে।’
শবে বরাত উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার চকবাজারে নানা ধরনের হালুয়া ও রুটি বেচাকেনার ধুম চলছে। ঠান্ডা লাচ্ছি, মাওয়ার লাড্ডু, রসমালাইসহ নানা ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। চকবাজার ছাড়াও ওয়ারী, রায় সাহেব বাজার, নারিন্দা ও আশপাশের এলাকায় রুটি-হালুয়া কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বাহারি সব রুটির দাম আকার ভেদে ২০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত। আর বিভিন্ন ধরনের হালুয়া পাওয়া যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০০-১০০০ টাকায়।
শবে বরাতে আতশবাজি, পটকাবাজি নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সম্পর্কিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি জানিয়েছে, শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপন নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শবে বরাত রাতে আতশবাজি ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি মাইক দিয়ে মহল্লায় মহল্লায় প্রচার করা হয়েছে।