টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ষাটোর্ধ্ব বেনু বেগম পুত্রশোকে পাথর হয়ে গেছেন। চোখের জল, বুকফাটা কান্না—সবই যেন ফুরিয়ে গেছে তাঁর। ছেলে পলাশের ছবি বুকে চেপে মাঝে মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার অসুখের খবর হুইনা বাড়ি আবার নইছাল। পোলা আইল। লাশ অইয়া। মিরপুরে গন্ডগোলে কেরা যে আমার পোলাডারে গুলি কইরা মারল তা আল্লায় জানে।’
পলাশের পুরো নাম ফিরোজ তালুকদার পলাশ (৩৮)। বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ঘাটান্দি গ্রামে। তিনি ঢাকার মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। স্ত্রী রেশমা আর একমাত্র মেয়ে রাইকাকে (৬) নিয়ে সাত বছর ধরে মিরপুরেই বসবাস করেন। ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। পলাশ দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। ভূঞাপুর পৌরসভার ওয়ার্ড বিএনপির নেতা হিসেবেও পরিচিতি আছে তাঁর। এদিকে পাঁচ মাস আগে পলাশের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছোহরাব হোসেন তালুকদার মারা যান। তার পর থেকেই পলাশ প্রতি শুক্রবার বাড়ি এসে মাকে দেখে যেতেন।
পলাশের মা বেনু বেগম বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আমার সঙ্গে পলাশের মোবাইল ফোনে কথা হয়। আমার শরীরের দুর্বলতার কথা শুনে আমাকে দুইটা ডিম সিদ্ধ করে খেতে বলে। আধঘণ্টা পরে আবার ফোন করে ডিম খেয়েছি কি না, সেই খবর নেয়। তার পরও বলে, মা আমি আজই আসতাছি। এই কথাগুলোই ছিল পলাশের সঙ্গে আমার জীবনের শেষ কথা।’
পলাশের দাদা জসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, পলাশের বাবা ছোহরাব আলী তালুকদার মারা যাওয়ার পর পলাশের মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এরই মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন বড় ছেলে।