ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে নারায়ণগঞ্জ শহরে ঢুকছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন। কিন্তু উল্টো পথে চলাচলে বাধা দেয় ট্রাফিক স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। আর তাতেই রেগে আগুন হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন তিনি; যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, উল্টো পথে থাকা গাড়িতে বসে বিএনপি নেতা রেজা রিপন বলছেন, ‘কী সমস্যা, এদিকে আসো। তোমরা চেম্বার অব কমার্সের না? সোহেলরে (সহসভাপতি, চেম্বার অব কমার্স) ফোন করো। করো ফোন সোহেলকে। তারপর জিজ্ঞেস করো হু আই অ্যাম।’
জবাবে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আইনজীবীসহ অনেকের গাড়ি আমরা উল্টো পথে আসায় ফিরিয়ে দিয়েছি। আইন সবার জন্য সমান।’ তখন আরও উত্তেজিত হয়ে রেজা রিপন বলেন, ‘আমি এখান দিয়েই (উল্টো পথে) যাব। এই শহরে থাকতে হলে মানুষ চিনে থাকতে হবে।’
ঘটনার সময় রেজা রিপন ফোন করে তাঁর অনুসারীদের ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। তখন তাঁর অনুসারীরাও সড়কে দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। তাঁদের মধ্যে একজন এসে বলেন, ‘গাড়ি আটকাইসে কে? এখানে দ্রুত বেড়া দেন। চেম্বারে ফোন দিয়া বলেন, এদিকে বেড়া দেন। আজকের ভেতরে বেড়া দেবেন। আলমরে ফোন দেও, ফোন দিয়া কও, অর বসের গাড়ি আটকাইছে।’
মূলত নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট বাড়ায় রমজান মাসে যানজট কমাতে ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স। স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্বে রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকেই পুরো শহরের যানজট অনেকটা কমে গেছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপি নেতার এমন আচরণ ক্ষুব্ধ করেছে সাধারণ মানুষকে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক শওকত আলী বলেন, ‘২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতা চন্দন শীল ছাত্রদের সঙ্গে এভাবেই দুর্ব্যবহার করেছিল। এখন বিএনপি নেতারা সেই পথে হাঁটছে। এটা খুবই নিন্দনীয় ঘটনা।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সেক্রেটারি আফজাল হোসেন পন্টি বলেন, ‘এখন এসেছে নতুন নেতা। তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। নির্বাচনের পর এরা কী করবে, তা সহজে অনুমান করা যায়। আল্লাহ নারায়ণগঞ্জবাসীকে এই ধরনের নেতাদের থেকে রক্ষা করুক।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন রেজা রিপন। তিনি দাবি করেন, ‘রাস্তার এক পাশ ভাঙা থাকায় অনেকে সড়কের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। আমার পাশ দিয়ে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসও অতিক্রম করে। কিন্তু আমার গাড়িটি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। ঘটনার ভিডিও এডিট করে আমাকে রাজনৈতিক কারণে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এরপরেও আমার ব্যবহারে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’