রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে কৃষিকাজে দিনদিন বাড়ছে নারীর সংখ্যা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। পুরুষের সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করছেন তাঁরা। কৃষির মাধ্যমে অনেক কিষানিই চালাচ্ছেন তাঁদের সংসার।
সাম্প্রতিক বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের বড় কানাবিলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ-ছয়জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেতে করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করছেন কুমারেশ চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী প্রমিলা মণ্ডল (৩৫)। হাত দিয়ে ধানের চারা রোপণের পরিবর্তে প্রমিলা ব্যবহার করছেন আধুনিক এই যন্ত্র। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ২২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে তাঁরা নেন ৮০০ টাকা।
প্রমিলা দেবীর সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘরে তাঁর চার মেয়েসন্তান। সংসারে স্বামীই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় অনেক আগে থেকেই স্বামীর সঙ্গে মাঠে কাজ করেন তিনি। তবে তাঁর এই পথচলা এতটা সহজও ছিল না। নারী হওয়ায় সমাজের মানুষের কাছে শুনতে হয়েছে নানান কথা। এরই মধ্যে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা সরকারি ভর্তুকি পেয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন কিনেছেন। নিজের জমির পাশাপাশি তিনি অন্যের জমিতেও ধান রোপণ করে দিয়ে আসেন এই আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে।
প্রমিলা মণ্ডল বলেন, ‘নারী হওয়ায় প্রথমদিকে বেশ কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে আমাকে। তবে আমিও দমে যাইনি, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি কৃষিকাজ করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। এখন আমি সংসার চালানোর পাশাপাশি কৃষিকাজ করেই তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। আমি চাই আমার মতো করে অন্যান্য নারীও কৃষিকাজে নিজেকে যোগ করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এলএসপি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। এখানে ২০ জন সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ জনই নারী। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে ৫০ একর জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে ধানের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছি।’
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন—নারুয়া, জঙ্গল, নবাবপুর, ইসলামপুর, জামালপুর, বহরপুর ও সদরে ৩৩ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার রয়েছেন পুরুষ কৃষক। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজে জড়িত রয়েছেন ১৫ হাজার নারী। সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ৩ হাজার। এসব কিষানি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন কৃষিকাজে। করোনা মহামারির শুরু থেকে কৃষিকাজে নারীর সম্পৃক্ততা বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বালিয়াকান্দিতে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ৭ থেকে ৮ হাজার নারী। আর সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন ১ হাজার।
এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমান এ উপজেলায় ১৫ হাজার নারী কৃষক রয়েছেন। এর মধ্যে সরাসরি কাজ করছেন ৩ হাজার। নারী কৃষকের সংখ্যা বালিয়াকান্দিতে ক্রমাগত বাড়ছে, এটি একটি ভালো দিক। এভাবে নারীরা সরাসরি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে দেশ বাণিজ্যিকীকরণের দিকে এগোবে। কৃষিতে দেশ আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। কৃষি বিভাগ থেকে এই কিষানিদের পাশে থেকে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’