নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন করা হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে ১০ বছর। কিন্তু এখনো এই আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। আইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন খুবই কম।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি, সাইটসেভার্স, ইউনিসেফ আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রকল্পের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (অ্যাকসেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ আমাদের অধিকার দিয়েছে। কোথাও গেলে এখন আমাদের করুণা চাইতে হয় না। আমরা বলতে পারি এটা আমাদের অধিকার। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন আছে। আইনটিকে আমরা স্বরূপে পাই না।’
প্রতিবন্ধী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণ, নিশ্চিত করবে এসডিজি অর্জন’। সভায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। যিনি যে কাজ করার সামর্থ্য রাখেন, তাঁকে সেই কাজে দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন লিড অয়ন দেবনাথ এবং ইউএনডিপির আমিনুল আরিফিন। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের দেশে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। তবে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবর্তনের প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি।’
সভায় আসা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, আইনে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকের বেশি স্কুলে যায় না। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ ২০২১ বলছে, প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঁচ থেকে সতেরো বছর বয়সীর মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। গণপরিবহন ও সরকারি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা কম।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ বাড়াতে (ডিজএবিলিটি ইনক্লুশনে) জাতিসংঘের আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভায় বক্তারা প্রতিবন্ধী ভাতা বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী জাতীয় কর্মপরিকল্পনার জন্য বাজেট বৃদ্ধি ও প্রতিবন্ধী ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগের আহ্বান জানান।