মুক্তিযুদ্ধে মায়েদের অবদান নিয়ে আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মায়েরা শুধু তাঁদের ছেলেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে পাঠাননি, মেয়েদেরও পাঠাতে পিছপা হননি। মেয়ে ঠিক কোথায় যাচ্ছে, আদৌ আর ফিরবে কি না—এমন অনেক কিছু একাত্তরের মায়েদের কাছে স্পষ্ট ছিল না।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মায়েদের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তাদের কথায় এ ছবি উঠে আসে। ‘শাহীন এবং সুহৃদ’ নামের একটি সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী শাহীন আনামের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মায়েদের ভূমিকা তুলে ধরেন কবি সুফিয়া কামালের মেয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও সাঈদা কামাল, জায়দা খানমের মেয়ে শিরীন পারভিন হক, আমেনা বিল্লাহর মেয়ে মিনু হক, মুশতারি শফির মেয়ে রুমানা শফি, মালেকা খানের মেয়ে সাংবাদিক সুমনা শারমীন, নূরজাহান মুর্শিদের মেয়ে তাজিন মুরশিদ, ফাতেমা আলমের মেয়ে রেশমা আমিন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক হাবিবুল আলম, মুসলেহা ইসলামের ছেলে রিজওয়ান বিন ফারুক, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম প্রমুখ।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমার মা বেগম সুফিয়া কামাল মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই মুক্তির আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বাসায় এ নিয়ে আলোচনা, মানুষের আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বুঝতে পারি, আমরা একটি মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি। মা যখন আমাকে আর আমার বোনকে যুদ্ধে পাঠান, তখন আমার বয়স ২১ বছর আর বোনের বয়স ১৯ বছর। মুক্তির আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন।’
রুমানা শফি বলেন, তাঁর মা মুশতারি শফি স্বামীর অনুপ্রেরণায় মেয়েদের জন্য ছাপাখানা চালু করেছিলেন যার সব কাজ মেয়েরাই করত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। যুদ্ধে স্বামী ডা. শফি ও একমাত্র ভাইকে হারিয়েও হাল ছাড়েননি তিনি।
মিনু হক তাঁর মা আমিনা বিল্লা প্রসঙ্গে বলেন, সুরক্ষিত ধানমন্ডির নিরাপদ অবস্থানে থেকেও তাঁর মা আমিনা বিল্লাহ স্বেচ্ছায় মেয়েকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের আগরতলা পাঠান।
শিরীন হক বলেন, ‘২৫ মার্চের পরে কয়েকটি বিপন্ন পরিবারকে বাসায় আশ্রয় দেন মা। এ সময় মায়ের একই সঙ্গে কঠিন ও কোমল মন দেখেছি। বাসায় আমরা অনেকে মিলে থাকতাম তখন। খুব অল্প খাবার ভাগ করে খেয়েছি।’
তাজিন মুর্শিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর মা দূত হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁদের পুরো পরিবারই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তবে মায়ের ভূমিকাই ছিল মুখ্য।
সুমনা শারমীন জানান, তাঁর মা মালেকা খান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসনের কাজ করেন।
সঞ্চালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমাদের বাসায় মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও অনেক জিনিসপত্র রাখত। আমরা ভাই-বোন মিলে সেগুলো পাহারা দিতাম। আমরা তখন অনেক ঝুঁকির মধ্যে এসব কাজ করেছি।’
অনুষ্ঠানের অন্য বক্তারা বলেন, একাত্তরে মায়েরা অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না।