নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না দশ বছর ধরে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না এগারো বছর হয়েছে। কুমিল্লায় তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার হচ্ছে না সাত বছর হয়েছে। এতে বোঝা যায় খুনিরা শক্তিশালী হলে তার বিচার হয় না। দেশে বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি নিয়ে মানুষ কি বলছে তাতে সরকারের কিছু আসে যায় না।’
আজ শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। এদিন মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার দশ বছর পূর্তিতে সমাবেশ হয়।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘এই দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মাফিয়াদের হাতে অনেকে নিহত হয়েছেন। অনেক জায়গায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন ধরে রাখা যায়নি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবির আন্দোলন এখন পর্যন্ত চলমান। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শাস্তির মুখোমুখি হয়নি বরং আন্দোলনকারীদের উল্টো হুমকি দিচ্ছে। তারা জানে, যেকোনো দিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এই আতঙ্কে সব সময় থাকে তারা। অব্যাহত আন্দোলন খুনিদের ব্যাপারে মানুষকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। ত্বকীকে কারা খুন করেছে তা মানুষের মনে গেঁথে গেছে।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘খুনিদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্যে রূপ নিয়েছে। কারণ সরকার জনগণের ওপর নির্ভর করছে না। সরকারের নির্ভরতা সারা দেশের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাফিয়া, দখলবাজ ও চাঁদাবাজদের ওপর। একইভাবে দেশের বাইরে আদানী, মোদি, চীন, রাশিয়াকে খুশি করতে হয় তাদের।’
সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, ‘১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর বাবা-মা-ভাইসহ সকলকে হত্যা করা হয়েছিল। দেশে ফিরে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, শিশু রাসেল হত্যার বিচার আপনি করলেন, তাহলে ত্বকীর হত্যাকারীরা কেন ছাড় পাবে? আমি আশ্চর্য হই ঐতিহাসিক নারায়ণগঞ্জ একটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। একটি পরিবার চাইলে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আজীবন টিকে থাকে না।’
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন জেলার নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘১৬৪ ধারায় এক আসামি আজমেরী ওসমানসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করে। কিন্তু আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে তার জবানবন্দি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলের বিচার দাবি জানিয়ে আসছি। দশ বছর ধরে আন্দোলন করার কারণে অনেক হুমকি-আক্রমণ এসেছে। আমরা নারায়ণগঞ্জকে খুনিদের আস্ফালন থেকে মুক্ত করব।’
সমাবেশ শেষে চাষাঢ়া থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।