এক সময় তারা ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা তরুণ-তরুণী। কঠোর প্রতিযোগিতা পেরিয়ে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অব্যাহতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে। তাদের অভিযোগ, সামান্য কারণ দেখিয়ে অন্যায়ভাবে তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার সকালে সেই স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট বুকে নিয়ে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর সচিবালয়ের বিপরীত পাশে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন দুই শতাধিক অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর। গায়ে তখনো পুলিশের ট্রেনিং ইউনিফর্মের স্মৃতি লেগে আছে, চোখে হতাশা আর হৃদয়ে অনিশ্চয়তার ভার।
একটাই চাওয়া—চাকরিতে পুনর্বহাল
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে মোট ৮২৩ জন ছিলেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে তাদের মধ্যে ৩২১ জনকে একাধিক দফায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি আটজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল প্রশিক্ষণ মাঠে উচ্চ স্বরে হইচই করা!
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাবেক ক্যাডেট এসআই মোস্তফা বলেন, ‘এক বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের পর সামান্য কারণে আমাদের চাকরি হারাতে হলো। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান; এই চাকরিটাই আমাদের স্বপ্ন ছিল। আমাদের পুনর্বহাল করা হোক।’
আরেক আন্দোলনকারী সাজেদুল হাসান বলেন, ‘৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচের চলমান ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, পুনর্বহাল চাই।’
চাকরিচ্যুত এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটি অবিচার ছাড়া কিছুই নয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন।’
দয়া নয়, ন্যায্য অধিকার দাবি
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক নারী সাবেক এসআই বলেন, ‘আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সব ধরনের পরীক্ষা পাস করেছি। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি স্যারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের চাকরির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি, দেখি সরকার কী ব্যবস্থা নেয়।’
অনিশ্চিত ভবিষ্যের শঙ্কায়
এসআই হওয়ার স্বপ্ন দেখা এই তরুণদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর আচমকা এমন সিদ্ধান্ত তাদের পরিবারকেও সংকটে ফেলে দিয়েছে।
চাকরিচ্যুত এক এসআই আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমার সাফল্য দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজ আমি বেকার। আমাদের কি আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই?’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে দুই-আড়াইশত অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর সচিবালয়ের উল্টোদিকের রাস্তায়—জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।’
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান
অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের চাওয়া সরকার তাদের অনুরোধ শুনুক এবং পুনর্বহালের মাধ্যমে তাদের স্বপ্নটাকে আবারও জাগিয়ে তুলুক। তারা বলছেন, তাদের অপরাধ যদি এতটাই গুরুতর হয়, তবে সেটা প্রমাণ করুন। কিন্তু সামান্য কারণ দেখিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেবেন না।
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই তরুণদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।