আজ ১০ ডিসেম্বর শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ৫১তম অন্তর্ধান দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি বাহিনী ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে অপহরণ করে। এরপর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিসেম্বরে তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রথম শিকার ছিলেন তিনি।
সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন রাজনৈতিক সাংবাদিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে দৈনিক আজাদে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম ও শেখ মুজিবুর রহমানের খবরগুলো তিনি ছাপতেন, যদিও আজাদ ছিল মুসলিম লীগের অন্য ঘরানার লোক মাওলানা আকরম খাঁর পত্রিকা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক। অবরুদ্ধ নগরীতে বসে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। নানাভাবে ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ’ শব্দগুলো তিনি শিরোনামে নিয়ে আসতেন, যেন পাঠক বুঝতে পারে, দেশে আসলে কী ঘটছে। এ সময় তাঁর লেখা ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’, ‘অধূনা রাজনীতির এক অধ্যায়’, ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ’, ‘সেই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’সহ অসংখ্য রাজনৈতিক প্রতিবেদন লিখে দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেন।
সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন এ দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জনক। ছেলেধরাদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হন। ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। ’৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর নিখুঁত সাংবাদিকতা, ৬ দফা আন্দোলনে শেখ মুজিবকে নিয়ে ইত্তেফাকের বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন, সত্তরের নির্বাচনে বীরোচিত ভূমিকা তাঁকে কিংবদন্তি সাংবাদিকে পরিণত করেছে।
করোনার কারণে শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনের অন্তর্ধান দিবসটি পারিবারিকভাবে পালিত হবে।