ছাগল–কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি চার কর্মদিবস কার্যালয়ে অনুপস্থিত। ব্যাহত হচ্ছে উপজেলা সেবা কার্যক্রম। এরই মধ্যে তাঁর ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ জুন) উপজেলা পরিষদের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর কার্যালয় তালাবদ্ধ, তিনি নেই। এ সময় উপজেলা পরিষদে অনেকেই সেবা নিতে এসে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁদেরই একজন মোরাদ হাসান ভূঁইয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে সেবার জন্য ঘুরতেছি, তাঁকে (চেয়ারম্যান) পাচ্ছি না। তিনি না আসলে তো অনেক কিছু ব্যাহত হবে। কী আর করি। মিডিয়ায় ছাগল–কাণ্ড দেখতেছি। কী আর বলব।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের অফিস সহকারী আল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান মহোদয় ঈদের পর থেকে অফিসে আসছেন না। জানতে পারি তিনি ছুটিও নেননি, দেশেই অবস্থান করছেন। কবে আসবেন তা–ও জানি না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান চার কর্মদিবস অনুপস্থিত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল রোববার ছিল মাসিক সমন্বয়ক সভা। তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আসতে পারবেন না বলেছেন। ঈদের পর থেকে উনি অফিসে আসেননি।’
স্থানীয়রা জানান, নরসিংদীর রায়পুরার মরজালের লায়লা কানিজের বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন খাদ্য কর্মকর্তা। তাঁর চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। পৈতৃক সম্পত্তিতে পূর্বে তেমন ভালো কোনো দালান ছিল না। প্রায় দুই বছর আগে তিনি আগের বাড়ির জায়গায় বিদেশিদের আদলে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটিতে দৃষ্টিনন্দন ফটক, সীমানা প্রাচীর, শানবাঁধানো ঘাট ও নানা ফুলের বাগান রয়েছে। বাড়িটির ভেতরে রাজকীয় আসবাব ও দামি জিনিসপত্রও রয়েছে। বাড়ির সামনে ‘লায়লা কানিজ লাকি সড়ক’ নামে সড়ক রয়েছে।
আরও জানা যায়, মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীতে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের নামে অঢেল সম্পত্তি গড়েছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে রাতারাতি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক নেত্রী বনে যান। রাজনীতিতে প্রথমে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জেলাজুড়ে দানবীর হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসিত ও পরিচিতি লাভ করেন।
চলতি বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংরক্ষিত নারী আসন (নরসিংদী-গাজীপুর আসন) পেতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গত ২৯ মে (টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ওই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. সুমন মিয়ার মৃত্যুতে নির্বাচন অফিস থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন স্থগিত করেন নির্বাচন কমিশনার।
অনুপস্থিতির কারণ জানতে লায়লা কানিজ লাকির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।