জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ইউনিট ছাত্রলীগ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করে। এই হলের এক ছাত্রলীগ নেতাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একদল শিক্ষার্থী মারধর করা নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তব্যরত দুই সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রড, রামদা, লাঠি, ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন নেতা-কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে রোববার (১৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) ৪৭ ব্যাচের এবং রবীন্দ্রনাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এতে বাংলা বিভাগের ছাত্র আহমেদ গালিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভীর ইসলাম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান সাগর ও খালিদ হাসানসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন মাহফুজুর। অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী উভয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনার জেরেই বুধবার রাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ চালান কয়েকজন নেতা-কর্মী।
গত রাতের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বটতলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। ফলে বটতলার একাংশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
হামলার শিকার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সংবাদকর্মী হিসেবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট, নিরাপত্তাকর্মীদের উপস্থিতিতে মীর মশাররফ হোসেন হলের একাধিক শিক্ষার্থী আমার ওপর ও আমার সহকর্মী জুবায়ের আহমেদের ওপর লোহার পাইপ, রামদা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বলে—ভিডিও করতেছে, ধর ওরে, ওই যে সাংবাদিক, মার ওগোরে, এই মামুন তোর ভিডিও বের করব, এ ধরনের কথা বলে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। আমরা এ ধরনের ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিই। এ ক্ষেত্রেও সেটিই করা হবে। এর বাইরে সাংবাদিক মারধরের বিষয়েও অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’