জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) যশোরের মনিরামপুর আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে অর্থ লোপাটের নানা অভিযোগ উঠেছে। এখানে প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া বিল ভাউচার, নাশতার ব্যয় এবং কেন্দ্রের কক্ষ ও কোয়ার্টার ভাড়া থেকে টাকা হাতানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে অফিস ফাঁকি ও নামমাত্র মাঠ প্রশিক্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ঢাকা থেকে পরিচালিত হওয়ায় এবং স্থানীয়ভাবে তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় কেন্দ্রে এসব অনিয়ম চলছে। আর এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তুহিন হোসেনকে সহযোগিতা করছেন অফিস সহকারী আসমত আলী।
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এ সময় কর্মকর্তা তুহিনকে দপ্তরে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতাল চত্বরে অবস্থিত কেন্দ্রটিতে মূলত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলে। বছরে চারবার মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ১৫-২০টি সংক্ষিপ্ত কোর্সের প্রশিক্ষণ হয়।
সূত্র জানায়, মৌলিক প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় ক্লাস নেওয়া হয় না। প্রতি ক্লাসের জন্য প্রশিক্ষকদের ২ হাজার টাকা সম্মানী বরাদ্দ থাকলেও কম ক্লাস নিয়ে বাকি টাকা লুটপাট করা হয়।
কেন্দ্রে অফিস সহকারীর দেওয়া তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস ৮টি, চিকিৎসক অনুপ বসু ১০টি এবং চন্দ্র শেখর ও সাদিয়া রায়হান ১২টি করে ক্লাস নিয়েছেন। তবে বাস্তবে তন্ময় ও অনুপ ৪টি করে ক্লাস নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তন্ময় বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বাড়তি স্বাক্ষর করানোর বিষয়টি আমরা দেখেছি। তাঁরা যে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন, এটা আগে বুঝতে পারিনি।’
এদিকে মাঠ প্রশিক্ষণে অফিসের গাড়িচালকদের দিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের নামমাত্র ঘুরিয়ে আনা হয়। এরপর দুজন পরিবার কল্যাণ সহকারীকে দিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে কিছু সম্মানী দিয়ে বাকি টাকা লোপাট করা হয়।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণে ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দে একজন পিটি শিক্ষক রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মনিরামপুর মহিলা কলেজের শিক্ষক রেশমা পারভিনকে দিয়ে পুরো কোর্সে ৫-৬ দিন পিটি করিয়ে বাকি টাকা লোপাট করা হয়। রেশমা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে তাঁরা ৬ হাজার টাকা দেন।’
অন্যদিকে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য দৈনিক ৮০ টাকা নাশতা বাবদ বরাদ্দ থাকলেও দেওয়া হয় ১ কাপ চা আর ৫ টাকার বিস্কুট। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের কোয়ার্টার ও বিভিন্ন এনজিওর কাছে কক্ষ ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী আসমত বলেন, ‘নিয়ম মেনে ভাড়া দিতে গেলে অনেক ঝামেলা। সম্পর্কের খাতিরে অনেকে মাঝেমধ্যে বিনা ভাড়ায় তাঁদের সভা করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুহিন বলেন, ‘অফিসের গোপনীয় বিষয় আপনাকে বলা যাবে না। সবকিছু নিয়মভাবে চলছে। আমাকে অনেক সময় ঢাকায় মিটিংয়ে যেতে হয়। আমি মাঝেমধ্যে অফিসে না গেলে ওরা নাশতা নিয়ে একটু অনিয়ম করে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নিপোর্টের পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এমন অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’