যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম উদ্বোধন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মনিরামপুরে যাচ্ছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ দিকে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেন এই অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের হাজির হতে হবে, তা নিয়েও তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষক জানিয়েছেন, বেতন আটকে দেওয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানির হাত থেকে বাঁচতেই বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানে এসেছেন তাঁরা। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে শিক্ষকদের থাকতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার মধ্যে উপজেলা চত্বরে হাজির হতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষকেরা। গতকাল সোমবার এসংক্রান্ত মৌখিক আদেশে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জানানো হয়েছে। উপজেলার ৪৫০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষককে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকাল ১০টায় সরেজমিনে উপজেলা পরিষদ চত্বরে দেখা গেছে, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। সামনের চেয়ারে বসে রয়েছেন শতাধিক শিক্ষক। এদিকে দলে দলে শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে এসে হাজির হচ্ছেন। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনিরামপুরে আসছেন এটা গতকাল (সোমবার) প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে আমাদের বাধ্যতামূলক হাজির থাকতে বলা হয়েছে। আসা-যাওয়ার জন্য কোনো খরচ দেবে কি না তাও কিছু বলেনি।’
শিক্ষকেরা আরও বলেন, ‘শুধু শিক্ষকদের সহজেই ডেকে কোনো অনুষ্ঠানে হাজির করা যায়। না গেলে বেতন বন্ধের হুমকি দেয়। এ জন্য ডাকলেই আমরা বাধ্য হয়ে হাজির হই।’
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমত আরা পারভিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূলত অনুষ্ঠানে লোকসমাগম ঘটাতে শিক্ষকদের আসতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউএনওর নির্দেশনা আছে।’
ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর পরিচালনার বিষয়ে শিক্ষকদের কিছু নির্দেশনা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল কলেজ খুলবে। এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের আসতে বলা হয়েছে।’
তবে ইউএনওর বক্তব্যের বিষয়ে উপস্থিত শিক্ষকেরা বলেন, ‘এ যাবৎ কোনো সময় স্কুল-কলেজ খোলার আগে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমাদের উপজেলায় ডাকা হয়নি। এ ছাড়া অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।
উপস্থিত একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘মনিরামপুরে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলে কোন্দল চলে আসছে। মূলত কাঙ্ক্ষিত লোকসমাগম ঘটাতে শিক্ষকদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।’