বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য না পেলে যশোরের সীমান্তপথ দিয়ে ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে পাচার রোধে আজ সোমবার থেকে ১০ দিন বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া পুলিশের নজরদারি রয়েছে সীমান্তে।
সতর্কতা জারির বিষয় আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির টহল। পাচার ঠেকাতে সীমান্ত সড়কে প্রবেশকালে সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। ঈদুল আজহার দিন থেকে আগামী ১০ দিন এই সতর্কতা থাকবে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাচারের শঙ্কা বেড়েই চলেছে। এই পাচার ঠেকাতে প্রতিবছর বিজিবির পক্ষ থেকে কোরবানির পরে সীমান্তজুড়ে নেওয়া হয় বাড়তি সতর্কতা। এ বছরও পাচার রোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে। এতে ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবি আজ সোমবার থেকে পরবর্তী ১০ দিন সীমান্তের বিশেষ বিশেষ পয়েন্ট চিহ্নিত করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ছাগলের চামড়া বিক্রি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরকারনির্ধারিত দাম দিচ্ছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের পশুর চামড়ার গুণমান উন্নত হলেও দেশে কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে বেশি লাভের আশায় সীমান্তপথে চামড়া পাচারের প্রবণতা আছে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে। এর আগে কয়েকবার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া আটকের ঘটনা ঘটেছে।
চামড়া ব্যবসায়ী রহমান বলেন, ‘৭০০ টাকার চামড়া ৩০০ টাকা বলছে ক্রেতারা। ছাগলের চামড়ার দাম বলছে ৫ টাকা। এমন দাম থাকলে পাচার হতে পারে এবার।’
কাজল নামের আরেক চামড়া ব্যবসায়ী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেই দাম ক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দিচ্ছেন না। এবার লোকসান গুনতে হবে।’
বেনাপোলে আসা ঢাকার চামড়া ব্যবসায়ী আবু বক্কর ছিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে জানান, এবার কোরবানির পশুর চামড়ার সরবরাহ কম। চামড়ার মানও ভালো না। তাই দাম বেশি দিতে পারছেন না।
৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া যাতে কোনোভাবে পাচার না হয়, তার জন্য সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিন এই সতর্কতা থাকবে।’
এবার কোরবানিতে ১ কোটি ৭ লাখ পশুর চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ পশু। এর মধ্যে ৫৫ লাখ গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো উট, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রাণী।
চলতি বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।