ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপির কর্মিসভায় প্রতিপক্ষের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জোড়াদাহ ইউনিয়নের লালন বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মসিউর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে কেন্দ্রীয় ড্যাব সদস্য ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম রহমান বাবুর জনসভায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে হরিণাকুণ্ডু থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাইজাল হোসেন এবং জোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজেদুর রহমান রনির লোকজন এ হামলা করেছে। তাইজাল হোসেন ও সাজেদুর রহমান জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের সমর্থক।’
সমাবেশে হামলার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সমাবেশস্থলে হঠাৎ কিছু লোকজন চায়নিজ কুড়াল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর শুরু করে।
সন্ধ্যায় ডা. ইব্রাহীম রহমান বাবুর সমর্থকেরা ঝিনাইদহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে পোস্ট অফিসের সামনে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
রাত ৭টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল। এ সময় বলা হয়, হরিণাকুণ্ডুতে যারা বিএনপির নামে সমাবেশ করছিল, তারা পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের আশ্রয়দাতা। ঝিনাইদহের জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার নেতৃত্ব বাদে কোনো ধরনের মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করলে তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
এ সময় জেলা যুবদলের সভাপতি আহসান হাবিব রনক, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৌমেনুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করে। শহরজুড়ে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম রহমান বাবু ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। দীর্ঘদিন ধরেই বিবদমান দুই গ্রুপ আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছিল। আজ শনিবার দুপুরেও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গণমিছিল করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম রহমান বাবু বলেন, ‘হরিণাকুণ্ডুতে পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার কর্মিসভায় প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৌমেনুজ্জামান বলেন, ‘ঝিনাইদহ শহরে কিছু নব্য বিএনপি জাগ্রত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর যেসব বিএনপি এসেছে তাদের বেছে বেছে নিজ হাতে বিচার করব। তারেক রহমান বলেছেন, ৫ তারিখের পর কোনো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেন দলে আসতে না পারে। আমি ওয়ার্নিং দিতে চাই, আজকের পর থেকে এম এ মজিদ ও জাহিদুজ্জামান মনা ভাইয়ের নেতৃত্ব বাদে যদি বিএনপির কেউ একটা মিছিল মিটিং করতে চান তাহলে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, ‘হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপির কোনো সমাবেশ ছিল না। এটা আওয়ামী সমাবেশ ছিল। এ ছাড়া যেসব কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা দলীয় শিষ্টাচারবহির্ভূত। জেলায় শৃঙ্খলা বজায় থাকুক, এটাই আমরা চাই। জেলা বিএনপির কমিটি আছে। এই কমিটির বাইরে কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কিছু করতে পারবে না।’
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, আহতদের মধ্যে একজনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ রউফ খান বলেন, এক পক্ষের কর্মিসভায় প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, হরিণাকুণ্ডুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা শহরসহ সব স্থানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।