রেললাইনের পাশে বসে কেক খাচ্ছিলেন মা-মেয়ে। অর্ধেক কেক খেয়ে মেয়ের হাত ধরে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন মা। এ সময় বিপরীত দিক থেকে ট্রেন কাছে আসতেই মেয়েকে জোর করে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে রেললাইনের ওপর ঝাঁপ দেন তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই বিচ্ছিন্ন হয় মা-মেয়ের শরীর।
আজ সোমবার বেলা ২টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি শ্মশানঘাট রেললাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যশোর থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করা নারীর পরনে ছিল কালো বোরকা। তাঁর নাম লাকী বেগম (৩৫)। আর মেয়ে সালোয়ার কামিজ পরিহিত ছিল। তার নাম সামিয়া আক্তার মিম (১২)। লাকী উপজেলার বড় হৈবতপুর গ্রামের মকছেদ আলীর মেয়ে। মা-মেয়ে স্থানীয় সাতমাইল বাজারে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর মিম স্থানীয় বড় হৈবতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ফাঁকা মাঠের মধ্যে রেললাইনের পাশে বসে মা-মেয়ে কেক খাচ্ছিলেন। কেক খাওয়ার মধ্যে ট্রেন চলে আসে। কালো বোরকা পরা ওই নারী তাঁর মেয়ের হাত ধরে ট্রেন লাইনের ওপরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বারবার মেয়েটি তার মায়ের হাত জোর করে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওই মা তাঁর মেয়েটিকে নিয়ে জোর করে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ে মারা যান।’
সাখাওয়াত বলেন, ‘বাঁচার জন্য মেয়েটি তার মায়ের হাত অনেকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু মা তাঁর মেয়েটির হাত ছাড়েননি। মনে হয়েছে অনেক কষ্ট নিয়ে ওই মা তাঁর মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই আত্মহত্যা করেছেন।’
সরেজমিন দেখা গেছে, যশোর-ঢাকা রুটের রেললাইনের সদরের চুড়ামনকাটি শ্মশানঘাট এলাকায় রেললাইনের ওপরেই মা-মেয়ের মরদেহ পড়ে রয়েছে। যেখানে মরদেহটি পড়ে রয়েছে তার থেকে ৫০ গজ দূরে লাইনের পাশে অর্ধেক খাওয়া একটি কেক পড়ে রয়েছে। পাশের কেক কাটার ছুরিটি রয়েছে। একটু দূরে মা-মেয়ের দুই জোড়া জুতা ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পড়ে রয়েছে।
রোজিনা বলেন, ‘মাস তিনেক আগে আবারও এজাজুল লাকীকে বিয়ের করার প্রতিশ্রুতি দেন। মাঝেমধ্যে এজাজুল লাকীর বাসাতে যাতায়াত শুরু করেন। তিন মাসের মধ্যে এজাজুল লাকীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও এজাজুল বিয়ে না করার টালবাহানা শুরু করেন। এতে মেয়েকে নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন লাকী।’
রোজিনা আরও বলেন, ‘এজাজুল বিয়ে না করার টালবাহানা শুরু করাতে বিভিন্ন সময়ে আমার বোন আত্মহত্যার হুমকি দিতেন। আজ সকালে ডাক্তার দেখানোর নাম করে আমার বোন ও তাঁর মেয়ে মিমকে নিয়ে শহরে যান। এরপর মিমের প্রিয় কেক নিয়ে তাঁরা রেললাইনের কাছে যান। তারপরে মিমকে নিয়ে আমার বোন আত্মহত্যা করেছেন।’
লাকীর ভগ্নিপতি জুম্মান আলী বলেন, ‘একাকিত্ব ও অভাবের মধ্যেই লাকীর সংসার পরিচালিত হচ্ছিল। লাকী হাতের কাজ করলেও সংসার ঠিকভাবে চলত না। আমি বাজার করে দিলে তা দিয়েই চলত। আমার মনে হয় অভাবের কারণে তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন।’
ডিবি জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনো জানা যায়নি। মরদেহের পাশ থেকে একটি বড় আকারের কেক, একটি মোবাইল ফোন ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। রেলওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে।
যশোর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনিতোষ বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ট্রেনে কাটা মা ও মেয়ের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এরপর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন। তবে কেন এবং কী কারণে মেয়েকে নিয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করলেন তা এখনো জানা যায়নি।