মেহেরপুরের গাংনীতে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের কষ্টে ফলানো ফুলকপি। অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে শীতকালীন এই সবজি চাষ করেছিলেন। কিন্তু ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ তাঁরা। লোকসান হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গাংনীর বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা ফুলকপি কেটে নষ্ট করছেন। কেউ কেউ গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপির চাহিদা থাকে, দামও ভালো পান তাঁরা। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে অনেকে ফুলকপির চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু এ বছর নানান জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও লাভের অঙ্ক শূন্যের ঘরে। এখান থেকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অনেক ট্রাক ভর্তি হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। অথচ এ বছর ট্রাক ভাড়া না ওঠায় খুবই কম ট্রাক যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ফুলকপিচাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারলেও শেষ দিকে এসে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বাজারে ফুলকপির দাম একেবারেই কম। তাই এগুলো আর বিক্রি হচ্ছে না। জমিতেই সব কপি নষ্ট হয়ে গেছে।’
সাহারবাটি গ্রামের কৃষক লাভলু হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে শীতকালীন ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। একেকটি কপির ওজন হয়েছিল দেড় থেকে দুই কেজি ওজন। ক্রেতা নাই, তাই জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। অনেকেই গরু ছাগলের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া, জমির লিজ খরচের টাকা নিয়ে খুব বিপদে আছি। সাহারবাটিসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষি এবার ফুলকপিতে লোকসান গুনছে।’
উপজেলার ঝোড়াঘাট মাঠের ফুলকপি চাষি জুনাব আলী বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের মতো এবার জমিতে ব্যবসায়ী না আসায় ফুলকপি তেমন বিক্রি করতে পারিনি। বাজারে কিছু বিক্রি করেছি। আর মাঠের কপি যে যেমন পারছে গরু-ছাগলের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। এবার আমার মতো অনেক ফুলকপি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে লোকসান হলে আর এই সবজির আবাদ করা সম্ভব হবে না।’
সাহারবাটি মাঠের চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘এই ফসল পরিপক্ব হলে আর খেতে রাখা যায় না। রাখলে খেতেই নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদন খরচই পাচ্ছি না। এর ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। ঋণ পরিশোধ করব কী দিয়ে, আবার পরিবারের খরচসহ ভবিষ্যতে ফসল উৎপাদনের টাকাও রইল না। বেশি দামে বীজ-সার কিনে কম দামে ফসল বিক্রি করলে তো মূলধন হারিয়ে যাচ্ছে। কখনো ভাবতে পারিনি এবার ফুলকপির এমন দশা হবে আর এত লোকসান গুনতে হবে।’
কাথুলী মাঠের হাসানুজ্জামান নামের এক চাষি বলেন, ‘আমাদের মাঠের কিছু ফুলকপি চাষির করুণ অবস্থা। কপি বিক্রি করতে না পেরে হতাশ তারা। আর মাঠেই কপি নষ্ট হচ্ছে। তাই যে যেমন পারছে কেটে নিয়ে যাচ্ছে গরু-ছাগলের জন্য। আবার কেউ কেউ মাঠেই গরু-মহিষ দিয়ে খাওয়াচ্ছে। এবার কপি চাষিদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ফুলকপি চাষ হয়েছে ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। বাঁধাকপি চাষ হয়েছে ৫০০ হেক্টর জমিতে।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে গাংনীতে ব্যাপকভাবে বাঁধাকপি ও ফুলকপির আবাদ হয়। হঠাৎ দরপতন হয়েছে। অনেক চাষি ফুলকপি বিক্রি করতে না পারায় জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য অনুদান এলে তা তাঁরা পাবেন।