সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পতিত জমিতে একই সঙ্গে সূর্যমুখী ফুল ও তিল চাষ করছেন চাষিরা। সেচ সংকটের কারণে এসব ফসল আবাদ করে অনেকে লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
শ্যামনগর উপজেলার সিরাজপুর ও পার্শ্ববর্তী রুদ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে সূর্যমুখীর খেতে সাথি ফসল হিসেবে অনেকে তিলের বীজ বুনেছেন। সূর্যমুখী গাছ বড় হওয়ার পর তিল চাষ শুরু করায় দুটি ফসল নির্বিঘ্নে ঘরে তোলা যাবে। সেচের অভাবে বোরো চাষের সুযোগ না থাকায় পতিত থাকা জমিতে আবাদের উদ্যোগ নিয়ে এসব ফসল চাষ করা হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা।
সিরাজপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও রুদ্রপুর গ্রামের এসকেন্দারসহ কয়েকজন কৃষক জানান, বিগত বছরে আউশ মৌসুমের পর থেকে চাষ উপযোগী অনেক জমি পতিত অবস্থায় থাকত। পাশের কাওরাখালী খালের পানি ব্যবহার করে কয়েকজন চাষি বোরো চাষ করেও সেচের অভাবে ফসল ঘরে ওঠাতে পারতেন না। চলতি বছর স্থানীয় ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাফরুল আলম বাবুর উৎসাহে কয়েকজন কৃষক প্রায় ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও নাসির হোসেন নামের সিরাজপুরের দুই কৃষক জানান, স্বল্প সেচের মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব। তা ছাড়া বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সূর্যমুখী ও তিল চাষ করছেন তাঁরা। সূর্যমুখী গাছ বড় হলে একই খেতে সীমিত সেচে তিল চাষ করা যায়। বিঘা প্রতি ফলন বোরো ধানের তুলনায় কিছুটা কম হলেও সেচের সংকটের কারণে তাঁরা সূর্যমুখী ও তিল চাষ করছেন।
সিরাজপুর ও রুদ্রপুর কৃষকদের দাবি, বীজ কেনা, সেচ, সার, কীটনাশকসহ সূর্যমুখী ফুল চাষাবাদে বিঘাপ্রতি কৃষকদের সর্বোচ্চ খরচ চার-পাঁচ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মণ সূর্যমুখী ফল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ফলের তেল নেওয়া যায়। যা থেকে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকায় আয় করতে পারেন কৃষকেরা। এ ছাড়া খেতে উৎপাদিত তিল থেকেও খরচ বাদ দিয়ে ভালো আয় করার আশা করছেন চাষিরা।
ভুরুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জাফরুল আলম বাবু জানান, এলাকার নলকূপের পানি তীব্র লবণযুক্ত। তাই সেচের অভাবে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়। এই জন্য তিনি কৃষকদের সূর্যমুখী ও তিল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এর আগে তিন-চার বিঘা জমি বোরোর আওতায় এলেও বাকি জমি পতিত থাকত।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, চলতি বছর ভুরুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যানের উদ্যোগে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারে সূর্যমুখী তেলের সর্বোচ্চ দাম থাকায় এক ফসলি জমিতে স্বল্প সেচে অনেক খেতে সূর্যমুখীর সঙ্গে তিল চাষ করা হয়েছে।
সূর্যমুখীর ফল মাড়াই নির্দিষ্ট মেশিনে করা না হলে তুলনামূলক কম তেল পাওয়া যায় বলে জানান এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘সংরক্ষণ উপযোগী লবণ ও বৃষ্টি সহনশীল বীজ উদ্ভাবনসহ মাড়াইয়ের নির্দিষ্ট মেশিন সরবরাহ করা হলে উপকূলবর্তী শ্যামনগরে অল্প সেচের সুবিধা নিয়ে কৃষকেরা সূর্যমুখী ও তিলের চাষে লাভবান হতে পারেন।’