কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা কলারোয়ায় সোনিয়া নামের এক নারী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে প্রায় এক যুগ পর দেশে ফিরছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামী হাসানুর দফাদার। প্রবাসে উপার্জিত টাকায় এখানে পাকা ঘর করেছিলেন, কিন্তু একসঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা হলো না তাদের। হাসানুর ফিরলে এরপর সোনিয়াকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবার।
আজ মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গদখালী গ্রামের হাসানুর দফাদারের স্ত্রী সোনিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১০ আগস্ট শররে প্রচণ্ড জ্বর, ব্যথাসহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার জয়ন্ত সরকার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গৃহবধূ সোনিয়া খাতুনের শ্বশুর সাত্তার দফাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বউমার হঠাৎ করে জ্বর, গা ব্যথা আর বমি হচ্ছিল। তাৎক্ষণিক তাঁকে চিকিৎসার জন্য গত ১০ আগস্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে বমি ও গা ব্যথা বাড়তে থাকে চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েছে, কোনো ত্রুটি করা হয়নি। পরীক্ষায় দেখা গেছে তাঁর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। আজ ভোরে হাসপাতালে মারা গেছে আমার বউমা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়া থেকে আমার ছেলে আজ বাড়িতে আসছে, টিকিট কাটা হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরলে বউমার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। ছেলে বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত জানাজা দিয়ে মরদেহ বরফের মধ্যে রাখা হবে।’
সোনিয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোনিয়ার গায়ে অতিরিক্ত জ্বর ছিল, অতিমাত্রায় বমিও হচ্ছিল। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। ডাক্তার যখন যেটা বলেছে, যে পরীক্ষা করতে বলেছে, আমরা তখন সেটা করেছি। কিন্তু হঠাৎ আজ ভোরে সে মারা গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের কারোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। জামাই হাসানুর বাড়িতে ফিরলেই মেয়ের দাফন করা হবে।’
প্রতিবেশী সমাজসেবক এনায়েত খান টুন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসানুর দফাদার প্রায় ১২ বছর যাবৎ মালয়েশিয়ায় থাকে। বর্তমানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে তাদের। মেয়টার বয়স যখন ২ বছর তখন স্ত্রী-সন্তান রেখে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায় সে। ভিসা জটিলতার কারণে এত দিন দেশে আসতে পারে নাই। সম্প্রতি সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এর মধ্যে তার স্ত্রী মারা গেল। নতুন বাড়ি-ঘর করে সেখানে সবাই মিলে মিশে থাকাও হলো না।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার জয়ন্ত কুমার সরকার বলেন, ‘সোনিয়া খাতুন গত ১০ আগস্ট সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে তিনি মারা যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ২৫০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২০২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৬ জন রোগী।’