মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
আশ্বিন মাসের রোদে ঘাম ঝরছিল বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে আসা শরীর থেকে। গায়ের ছেঁড়া-কাটা জামাটি ভিজে লেপটে গেছে শরীরের সঙ্গে। ভ্যানের হাতল ধরে রাখা সরু হাত দুটিতেও বার্ধক্যের ছাপ সুস্পষ্ট। প্রবীণ এই মানুষটির নাম মো. সুরুজ মিয়া (৭০)।
গতকাল সোমবার যশোরের ঝিকরগাছার মল্লিকপুর খালপাড়া মসজিদ এলাকায় বিচালিবোঝাই একপি ভ্যান চালাতে দেখি তাঁকে। ৫২ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সুরুজ মিয়ার গ্রামের বাড়ি মল্লিকপুর। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে আবারও দেখা সুরুজ মিয়ার। তখন কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
বহু আগে কোনো একটি লেখায় পড়া ‘আজকের প্রবীণ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ইতিহাস’ লাইনটা মনে দাগ কেটেছিল। অথচ এই প্রবীণেরা কতটুকু ভালো আছেন, তার খোঁজ হয়তো আমরা অনেকেই রাখি না। এই বয়সে সংসারে বিশ্রামে থাকার কথা, নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু এই প্রবীণের ভাগ্যটা অন্যরকম!
জানা যায়, সুরুজ মিয়া স্বাধীনের পরের বছর থেকে ভ্যান চালান। পৈতৃক সূত্রে কোনো জমাজমি পাননি। দীর্ঘদিন ভ্যান চালিয়ে করেছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। গড়ে দিয়েছেন সন্তানদেরও ঠিকানা। আলাপচারিতায় সুরুজ মিয়া জানান, ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েসন্তান রয়েছে। ভ্যান চালিয়ে ১৯৯০ সালে গ্রামে ২১ শতক জমি কেনেন। পরে সেখানে ঘর তৈরি করেন। এখন ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। কিন্তু তিনি তাঁদের বোঝা না হয়ে এখনো ভ্যান চালাচ্ছেন। তাতেই যা আয় হয় তা দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।
মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বুদ্ধি-জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি সুরুজ মিয়া ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। এই বয়সেও তিনি ভ্যান চালাচ্ছেন। করো ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন।’