চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মোক্তার হোসেন (৪৫) নামে এক কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের। ঘটনাটি গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ অবস্থায় মোক্তার হোসেনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মোক্তার হোসেন জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মীরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ঘরে অসুস্থ ছিলেন মোক্তার আলী। তাঁর কোমরের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। মাঠে কাজ করা মোক্তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হননি। রোগের যন্ত্রণায় ছটফট করলেও ওষুধ কিনে খাওয়ার জন্য টাকাও তাঁর কাছে ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে নিজ বাড়িতেই বিষপান করেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোক্তার আলীর ছেলে নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা মাজার (কোমর) অসুখসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মাঠে খাটা কৃষক তিনি, যা কাজ করতেন তাই দিয়েই সংসার চলত। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর মাজার অসুখ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ-কর্ম করতে পারছিলেন না। যে কারণে তাঁর চিকিৎসাও ঠিকমতো করাতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে অভিমান করে বাবা সকলের অগোচরে বিষপান করেন।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোক্তার আলী খুবই দরিদ্র। মাজার হাড় ক্ষয় হওয়ায় বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকতেন। অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারতেন না। জানতে পেরেছি ওষুধ কিনতে না পারার কারণে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন মোক্তার।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খালিদ হাসান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা মোক্তার আলীকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায় তিনি বিষপান করেছেন। এ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জরুরি বিভাগে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরেই সদর থানা কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক বলেন, মোক্তার আলী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুরতহাল শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।