কপোতাক্ষ নদের কেশবপুরের চিংড়া-সারসা খেয়াঘাটে দীর্ঘ ৫২ বছর দড়া (দড়ি) টেনে নৌকায় খেয়া পারাপার করে আসছেন বৃদ্ধ জগদীস দাস (৬৫)। তাঁদের তিন পুরুষ এ কাজ করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে অধিক রাত পর্যন্ত দড়া টেনে এলাকাবাসীকে কপোতাক্ষ নদ পারাপারে সহযোগিতা করছেন জগদীস দাস।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে জগদীস দাসের পূর্বপুরুষেরা দড়া (দড়ি) টেনে নৌকায় খেয়া পারাপার করে আসছেন। নদের দুই পারের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হচ্ছে এখানকার নৌকা। তীব্র স্রোত বহমান সময়ে বাবা হাজারী লাল দাসের হাত ধরেই তিনি দড়া টেনে খেয়া পারাপার করতে শেখেন। কিন্তু একসময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদে এখন তেমন স্রোত নেই।
বৃদ্ধ জগদীস দাস বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদের চিংড়া-সারসা খেয়াঘাটে মাত্র ১২ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে বাবার সঙ্গে এ কাজ আসি। সেই থেকে প্রায় ৫২ বছর ধরে ভোর থেকে গভীর রাত অবধি কপোতাক্ষ নদে খেয়া পারাপার করে এলাকাবাসীর সহযোগিতা করছি। সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে নিত্যানন্দ দাস ও ছোট মেয়ে পূজা দাসকে লেখাপড়া করাচ্ছি।’
ছেলে নিত্যানন্দ দাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছোট মেয়ে পূজা দাস সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এ কাজ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন জগদীস দাস।
জগদীস দাস আরও বলেন, এলাকাবাসীকে খেয়া পার করে দিয়ে প্রতিদিন আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এই টাকায় এখন আর সংসার চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে সংসার চালাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
জগদীসের ছেলে নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রায় ১০০ বছর ধরে এ কাজ করছেন। বাবার পরে আমরা আর এ কাজ করতে চাই না।’
নিত্যানন্দ দাস আরও বলেন, এই এলাকার জীবনমান উন্নয়নে খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। এখানে সেতু নির্মাণ করলে নদের দুপারের মানুষ উপকৃত হবে।
উপজেলার চিংড়া গ্রামের তছলীম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ খেয়াঘাট থেকে জগদীসের নৌকায় পারাপার হয়। তিনিই এলাকার মানুষের পারাপারে একমাত্র ভরসা।