যশোরের কেশবপুরে কৌশলে জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছোট ছেলে সাঈদ গাজীর জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁর বাবা-মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন উভয় পক্ষের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করে অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে লিখে দেওয়া জমি ফেরতসহ ছোট ছেলে সাঈদ গাজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজকের পত্রিকায় ‘জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাড়িয়ে দিল ছেলেরা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনাসহ দুই ছেলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বৃদ্ধ দম্পতিরা হলেন উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের বুড়ুলী গ্রামের বৃদ্ধ বারিক গাজী (৮৪) ও বৃদ্ধা শহর বানু (৭৮)। গত বছর চিকিৎসা করানোর কথা বলে তাঁদের ছোট ছেলে সাঈদ গাজী (৪২) কেশবপুরে এনে কৌশলে টিপসহি নিয়ে ২৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করে নেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার ইউএনওর কার্যালয়ে দুই ছেলে ও ৫ মেয়েসহ নাতি-নাতনিদের উপস্থিতিতে সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠকে বাবার কাছ থেকে ছোট ছেলে সাঈদ গাজী ইচ্ছেমতো বেশি জমি লিখে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তদুপরি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন বলে স্বেচ্ছায় অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। পরে তিনি বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন, কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর রবিউল ইসলাম, গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কাজল প্রমুখ।
গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান কাজল বলেন, ‘পিতা-মাতাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছোট ছেলে খেতে দেবে ও বসতবাড়ির একটি কক্ষে রাখবে বলে অঙ্গীকার করেছে। বিষয়টি একমাস পর্যবেক্ষণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ দেওয়াসহ যাবতীয় দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ছোট ছেলে তার সম্পত্তি পিতাকে ফেরত দেবে।’
বৃদ্ধ বারিক গাজীর ছোট ছেলে সাঈদ গাজী বলেন, ‘বাপ-মা আমার বাড়ি থাকবে, তাঁরা যে কয়দিন বেঁচে থাকে আমি তত দিন খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিয়েছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ওই বৃদ্ধ দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সালিসে ছোট ছেলে সাঈদ গাজী পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরবর্তীতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় ছোট ছেলে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন।