আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
চলতি গ্রীষ্মকালে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য হয়ে আছে। এ ছাড়া পুকুর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং সরকারি ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে দূষিত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি পান করতে পারছে। উপকূলীয় এলাকায় সরকারিভাবে বসানো রয়েছে ৬৫০টি পিএসএফ (পন্ড ওয়াটার ফিল্টারিং বাই স্যান্ড)। জেলা পরিষদের ১৩২টি পুকুর রয়েছে। এ ছাড়া ১৫ হাজার গভীর নলকূপ, ৮ হাজার রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টারসহ ৪২ হাজার পানির উৎস চলমান রয়েছে। তবে এ তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।
জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা ছাড়াও লবণাক্ততা গ্রাস করেছে কালীগঞ্জ, দেবহাটা, সদর ও তালা উপজেলার একাংশ। সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ পিএসএফ অকেজো হয়ে আছে। জেলা পরিষদের পুকুরের মধ্যে ৭৩টি পুনর্খনন করা হলেও অধিকাংশ ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে রয়েছে। ফলে শুধু খাওয়ার পানি সংগ্রহেই প্রচুর শ্রমঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার নারীদের। আর নোংরা পানিতে গোসল করায় স্বাস্থ্য সমস্যায় রয়েছে অনেকেই।
শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকার মিনতি রায় বলেন, ‘আমাদের জলের খুব কষ্ট। ফিল্টারের জল নিতে অনেক দূর থেকে আসতে হয়। আর পুকুরের জল গরু-ছাগলদের খেতে দিতে হয়।’ একই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক হরিপদ রায় বলেন, ‘এটা সুন্দরবন এলাকা। এখানে লবণপানি বেশি। মিঠাপানি নেই বললেই চলে। এখানে মিঠাপানির কোনো প্রজেক্ট সফল হতে পারে না। আর লোনাজল খেয়ে মানুষের অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে। যাদের টাকা আছে, তারা পানি কিনছে। আর যাদের টাকা নেই, তাদের এই ময়লা পানি খেতে হচ্ছে।’
সংকট সমাধানের বিষয়ে কথা হলে সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সুপেয় পানির সংকট সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করছি। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্ল্যান্ট স্থাপন করছি। আয়রন ও আর্সেনিক দূরীকরণেও কাজ করছি।’
উপকূলীয় এলাকার পুকুরগুলোকে পুনর্খনন করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাকি পুকুরগুলো পুনর্খনন প্রক্রিয়াধীন আছে। কোনো পুকুর আর ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। পুনর্খনন করা পুকুরগুলোর চারপাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে, যাতে ময়লা-আবর্জনা না পড়তে পারে।
এ বিষয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পানির সংকট দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লবণপানিকে পানযোগ্য করা ব্যয়সাপেক্ষ। বৃষ্টির পানি ধরে রাখাটা ভালো উপায়। সেই লক্ষ্যে পানির পাত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের অনেক পুকুর রয়েছে। এসব জলাধারে যদি আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে পানির সংকট কেটে যাবে।’