জন্ম থেকেই একটি হাতের কবজি নেই শামীম হোসেনের (৩৫)। সেই হাতটিই তাঁর শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। শামীম হোসেন তাঁর সেই হাত দিয়ে ভাঙতে পারেন পাথরও।
শামীমের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসায়। তাঁর দিনের অধিকাংশ সময় কাটে বিভিন্ন ট্রেন স্টেশনে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা তাঁর প্রতিদিনের কাজ। কারণ ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের একটু শারীরিক কসরত দেখিয়ে যে পয়সা মেলে, এ দিয়েই চলে তাঁর সংসার। শামীমের কসরত নিজ চোখে না দেখলে অনেকের কাছেই গালগল্প মনে হতে পারে। যে যাই মনে করুক না কেন, শামীমের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই কবজিবিহীন হাতটিই। ওই হাত দিয়ে মানুষকে বিস্মিত ও আনন্দ দেওয়ার বিনিময়ে যে টাকা পান, তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মেলে শামীমের। এ সময় তিনি কিছু পয়সার জন্য তাঁর সেই কবজিবিহীন হাতটি দিয়ে সিমেন্টের পিলার ও পাথর ভেঙে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর এই কসরত দেখে ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন ট্রেনের যাত্রীরা। একপর্যায়ে তিনি রেললাইনের ওপর পাথর রেখে সেই কবজিবিহীন হাতটি দিয়ে তা ভাঙতে থাকেন।
ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন বেলগাছির ইমরান হোসেন। তিনি জানান, বিভিন্ন স্টেশনে তাঁকে দেখা যায়। সত্যি তাঁর কাজ দেখে বিস্মিত হয়েছি। তার শারীরিক এই কসরত দেখে উপস্থিত অনেকেই সাধ্যমতো সাহায্য দেন।
রাজবাড়ী রেল স্টেশন-সংলগ্ন বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, দুপুরে বাড়ি ফেরার পথে এ দৃশ্য দেখে বেশ বিস্মিত হয়েছি। নিজে না দেখলে অন্যর কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারতাম না।
শামীম হোসেন বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর যাবৎ এ কাজ করছি। বিয়ে করেছি ১২ বছর আগে। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও বাবা-মা আছে। আমার এক হাত জন্মগতভাবেই এমন। তাই আমাকে কেউ কোনো কাজকর্মে নেয় না। কী করব, না খেয়ে তো আর থাকতে পারি না। আবার ভিক্ষা করাও সম্ভব নয়। যত শক্ত কিছু হোক, এ হাত দিয়ে আঘাত করলেও ব্যথা পাই না। এটা আমার আয়-রোজগারের পথ। এটা দেখিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়েই সংসার চলে।