প্রতিনিধি
বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় উদ্বেগে আছেন মাছ চাষিরা। উপকূলীয় চাষিরা কয়েকদিন ধরেই রাত জেগে মাটি কেটে ঘেরের পাড় উঁচু করা, জাল দিয়ে ঘেরের চারপাশ ঘিরে দেওয়া ও পাটা ঠিক করার কাজ করেছেন। ইয়াস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে মৎস্য চাষিদের শঙ্কাও বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালেও বিভিন্ন এলাকায় ঘেরে চাষিদের তৎপরতা চোখে পড়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা এলাকার মাছ চাষি মহিদুল ইসলাম বলেন, টিভির খবরে শুনেছি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে অনেক পানি হবে। তাই ঘেরের পাড় সংস্কার ও উঁচু করার জন্য মাটি দিচ্ছি। ঘেরের কোথাও ছোট ছিদ্র থেকে পানি যাওয়া আসা করলেও সব মাছ বের হয়ে যায়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় মাছ আরও বেশি চঞ্চল হয়ে ওঠে।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ইউনূস আলী বলেন, যখনই কোনো বড় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হয় তখনই ঘেরের পাড় তলিয়ে যায়। তাই এবার আগেভাগেই নেট দিচ্ছি। যেসব জায়গায় নিচু রয়েছে সেখানে মাটি দিচ্ছি। এখন আল্লাহ ভরসা।
রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া এলাকার রবিউল ব্যাপারী বলেন, রাতে বৃষ্টি হয়েছে। নদী-খালের পানিও বেড়েছে। এখন জোরে বাতাস এবং বেশি পানির চাপ হলে ঘেরের কাঁতি (বাঁধ) ভেঙে যেতে পারে। তারপরও ঘেরে থাকতিছি, যতটুকু সামাল দেওয়া যায়।
সোনাতুনিয়ার মৎস্য চাষি সাবুল মোল্লা বলেন, বুলবুল, আম্পানের পর এবার আসছে ইয়াস। প্রতিটি ঝড়েই মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘেরে এখন মাছ ধরার সময়। এই সময়ে যদি ঘের তলিয়ে যায় তাহলে এই অঞ্চলের মানুষদের পথে বসতে হবে।
এদিকে বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমনের অভিযোগ, প্রতি দুর্যোগেই বাগেরহাটের মৎস্য চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবে কমিয়ে দেখানো হয়। উপকূলীয় মৎস্য চাষিদের বীমার আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। চাষির সংখ্যা লক্ষাধিক। গত বছরের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার ১৭ শ হেক্টর ফসলি জমির পাশাপাশি সাড়ে ৪ হাজারের বেশি চিংড়ির ঘের পানিতে ভেসে যায়। যাতে চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ২৬ মে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে আছড়ে পরতে পারে উপকূলে। এতে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন বাগেরহাট জেলার বেশির ভাগ মৎস্য চাষি।