চৌগাছার সবজিদর
সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত যশোরের একটি উপজেলা চৌগাছা। উপজেলার পৌরসভার বড় পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকভর্তি বিভিন্ন ধরনের সবজি সরবরাহ হয়। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে পাইকারি বাজারের ১০ ফুট দূরে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে এবং ১০০ ফুটের মধ্যে আরেকটি খুচরা বাজারে ৫ গুণ বেশি টাকায় বিক্রি করছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চৌগাছা বড় পাইকারি কাঁচাবাজারে ঢুকতেই দেখা যায়, একবার হাতবদলেই পাইকারি ২ থেকে ৫ টাকার প্রতিটি ফুলকপি খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। অন্যদিকে মুলার সরবরাহ কম থাকলেও পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২ টাকা কেজি দরে।
বড় পাইকারি কাঁচাবাজারে দেখা যায়, একজন কৃষক ‘ফুলকপি তিনটি ৫ টাকা, তিনটি ৫ টাকা’ বলে হাঁক দিচ্ছেন। পাশ ফিরতেই দেখা যায়, বড় আকারের (প্রতিটি এক কেজির বেশি) ফুলকপি আরেক কৃষক ‘একটি ৫ টাকা, ৩টি ১০ টাকা’ বলে দাম হাঁকাচ্ছেন।
পাইকারি বাজারের আড়তদার ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও এসব সবজি প্রায় দ্বিগুণ দামে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। বাজারে নতুন ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মিষ্টিকুমড়া, বিটকপির সরবরাহ স্বাভাবিক। তবু দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আড়তদার ও কৃষকেরা বলছেন, এই অঞ্চলের সবজি যেসব অঞ্চলে বেশি বিক্রি হতো, সেসব এলাকার সবজি বাজারে এসে যাওয়ায় ব্যাপারীদের কাছে সবজির চাহিদা ও দাম কমে গেছে।
বড় কাঁচাবাজারের আড়তদার মুকুল হোসেন বলেন, পাইকারিতে মুলা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ থেকে ২ টাকা দরে। শিম ৮-১০, মিষ্টিকুমড়ার ১৮-২৫, বেগুন ১৫-২৫, বাঁধাকপি (প্রতিটি) ৫-৭, ফুলকপি (প্রতিটি) ২-৫, বিটকপি ৫-৬, পেঁয়াজের কলি (ফুল) ৮-১০, কাঁচকলা ৮-১৫, পালংশাকের আঁটি ৪-৫ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে নতুন আলু (অন্য অঞ্চল থেকে আনা) ৪০ টাকা দরে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে।
চৌগাছা সদর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রতিটি ফুলকপি ২-৫ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেছি; যা গত বুধবারও ৮-১২ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম।’
বড় পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে ১০ ফুট দূরত্বে রয়েছে খুচরা বিক্রিকেন্দ্রে। এর ১০০ মিটার দূরে উপজেলা খুচরা বাজার। বাজার দুটিতে গিয়ে দেখা গেল, ফুলকপি প্রতি কেজি ২০-২৫, বাঁধাকপি ২০-২২, শিম ২৫-৩০, বেগুন ৩০-৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকেরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে তাঁরা সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। দিন দিন সবজির দাম কমে যাচ্ছে। ফলো মৌসুম শেষে তাঁদের লোকসানের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে।
পাইকারি বাজারের বড় আড়তদার হিসেবে পরিচিত মুকুল হোসেন বলেন, খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ সবজি কেনেন, তার পুরোটা বিক্রি হয় না। তা ছাড়া খাজনা, বাজারের জায়গার ভাড়া, ব্যবসায়ীর মজুরি ও বিনিয়োগ অনুযায়ী লাভ—সব হিসাব মিলিয়ে তাঁদের বিক্রি করতে হয়।
চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করছি ও খোঁজখবর রাখছি। তবে দেশের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সব এলাকায় স্থানীয় সবজি বাজারে এসে গেছে। ফলে আমাদের বাজারে সরবরাহ একই থাকলেও ব্যাপারীদের কাছে চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য দাম কিছুটা কম।’