মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
‘সজীবুল কো, আমার মনি কো, আমার মনিরে গ্রামের মানুষ কত ভালোবাসত। এত ভালো মনি ছিল আমার। স্বামী-সন্তান দুজন মানুষই মরে গেল। ইনকামের মানুষ ফুরোই গেল। আমার এখন কিডা ইনকাম করে খাওয়াবি।’
আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরে জাহাজে খুনের শিকার হওয়া সজিবুলের মা নাজমা বেগম (৪০)।
একদিকে সন্তানের মৃত্যু, অন্যদিকে স্বামীকে হারানোর বেদনা, সব মিলিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়। ছেলে ও স্বামীর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নাজমা। সজিবুলের মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না।
মাগুরার মহম্মদপুরের পলাশবাড়িয়ায় বাবা-ছেলের এমন মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। পরিবারের বাকি সদস্যদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া গ্রাম।
সজিবুলের স্বজনরা জানায়, দাউদ মোল্যার সংসার ছিল সীমিত আয়ের। তিন ছেলের মধ্যে বড় ও মেজ ছেলে জাহাজে চাকরি করতেন। বাবা দাউদ মোল্যা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। সজীবুল জাহাজে চাকরির আয়ের একটা অংশ বাড়িতে পাঠাতেন। বাবা-ছেলের উপার্জনে কোনো রকমে চলছিল সংসার। কিন্তু এখন আর তাঁদের আয় বাড়িতে আসবে না। দুই দিনের ব্যবধানে সে সংসার যেন ভেঙে পড়েছে।
২৪ ডিসেম্বর চাঁদপুরে জাহাজে খুন হওয়া সাতজনের মধ্যে একজন গিজার পোস্টে চাকরি করা সজিবুল ইসলাম। ২৬ ডিসেম্বর তাঁর অসুস্থ বাবা দাউদ মোল্যাও মারা গেছেন।
স্বজনেরা বলেন, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল সজীবুল ইসলাম। তাঁকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল মায়ের। একদিন জাহাজের বড় পদে চাকরি করবে সে। সে স্বপ্ন নিমেষে শেষ হয়ে গেছে।
সজীবুলের বড় ভাই রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ভাই, পরে বাবা মারা গেলেন। পরিবারটা শেষের পথে। আমি ছোট চাকরি করি। অনেক স্বপ্ন ছিল, সবাই মিলে পরিবারের পাশে দাঁড়াব। এখন তো সব শেষ। কেন মারল এমন করে আমার ভাইকে? কী দোষ করেছিল সে। যারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের বিচারের দাবি করছি।’