ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর স্থলবন্দর সংযোগ সড়কের মির্ধাপাড়া চৌরাস্তা মোড় প্রশস্তকরণ কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কাজ শেষ করা এই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। ওই মোড়ের দুপাশে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের কাজেও অনিয়ম করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, বিধি মোতাবেক কাজ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের মির্ধাপাড়া চৌরাস্তা মোড় এলাকা স্থানীয় মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বকশীগঞ্জ-রৌমারী সড়ক, বকশীগঞ্জ-নালিতাবাড়ী হয়ে সীমান্তবর্তী সড়ক, বকশীগঞ্জ-ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর সড়কের সংযোগস্থল হলো এই মোড়। সেখান দিয়ে কামালপুর স্থলবন্দরে প্রতিদিন শত শত মালবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে।
জামালপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কামালপুর স্থলবন্দর সংযোগ মির্ধাপাড়া চৌরাস্তা মোড় প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই নির্মাণকাজ পায় মেসার্স ত্রিপুরা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে এই কাজ কিনে নেন জামালপুর শহরের আকতার শাহীন নামের এক ঠিকাদার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ আলী, হাসান, মিজান, আকলিমা, পারভীন ও বায়জিদ বোস্তামী বলেন, ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে কাজ শুরু করেন। নিম্নমানের বালু, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। নির্মাণের সময় পানি ব্যবহার করা হয়নি। ভালোভাবে করা হয়নি রুলিংও। অনেক জায়গায় প্রশস্তকরণ না করেই কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ শেষ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনিয়মের বিষয়ে জানানোর পরও ঠিকাদারের লোকজন তোয়াক্কা না করে সড়ক ও জনপথের (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে নিজেদের ইচ্ছেমতো দায়সারাভাবে কাজটি শেষ করেন। স্থানীয়রা বলতে গেলেই উল্টো হুমকি-ধমকিও দেন ঠিকাদার আকতার শাহীনের লোকজন।
সরেজমিনে জানা গেছে, নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের মাধ্যমে মোড় প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হওয়ার পর ভারী যানবাহন বা ট্রাক চলাচল করলেই চাকার সঙ্গে উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। সামান্য ঘষা দিলেই বালু বের হয়। এ ছাড়া ওই মোড়ের দুপাশে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণকাজেও করা হয়েছে অনিয়ম। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এক সপ্তাহের মধ্যেই দেবে গেছে মোড়টির বিভিন্ন অংশ।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার আকতার শাহীন বলেন, ‘মির্ধাপাড়া মোড় প্রশস্তকরণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। সামান্য ত্রুটি থাকলে সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।’
মির্ধাপাড়া মোড় প্রশস্তকরণ কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মজনু মিয়া বলেন, ‘কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ করা হয়। তার পরও যদি কোনো সমস্যা দেখা যায়, সেটা ঠিক করা হবে।’
জামালপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘মির্ধাপাড়া মোড়ে দুটি বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের পর সেখানে রুলিং করা হয়েছে। ফলে সামান্য জায়গায় সমস্যা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে কাজে অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’