নেত্রকোনার দুর্গাপুরে লোকালয়ে এসে লোহার খাঁচায় বন্দী হয় একটি লজ্জাবতী বানর। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নন্দেরছটি গ্রাম থেকে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করা সেভ দ্য অ্যানিমেলস অব সুসংয়ের স্বেচ্ছাসেবকেরা। পরে বিকেলে বন বিভাগের সহযোগিতায় লজ্জাবতী বানারটিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বনে অবমুক্ত করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নন্দেরছটি গ্রামের নেতাই নদীর পাড়ে গাছের মগডালে প্রাণীকে প্রথম দেখা যায়। এ সময় বড় টর্চলাইটের আলো ফেলতেই চোখ লাল হয়ে জ্বলতে শুরু করে। ভয়ে গ্রামের আরও কয়েকজনকে খবর দিলে সবাই মিলে প্রাণীটিকে আটকের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে আজিজুল হক নামের একজন বৈদ্যুতিক তারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বাঁশের সাহায্যে মাটিতে নামিয়ে এনে লোহার খাঁচায় বন্দী করে ফেলেন।
আজিজুল হক বলেন, ‘রাতের আঁধারে গাছের আগায় একটি অচেনা প্রাণী দেখতে পাই আমরা। একপর্যায়ে আমার বাসার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক তার থেকে বাঁশের সাহায্যে মাটিতে নামিয়ে আনি এবং লোহার খাঁচায় বন্দী করি। এ সময় প্রাণীটি আমার হাতে কামড় দেয়। আসলে প্রাণীটি এর আগে আমরা কখনো দেখি নাই। এই প্রাণীর নাম কী, তা-ও আমাদের জানা নেই। তবে স্বেচ্ছাসেবকেরা আমাদের জানায়, এটির নাম লজ্জাবতী বানর। পরে তারা আমাদের কাছে এলে প্রাণীটিকে হস্তান্তর করি। ’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য অ্যানিমেলস অব সুসয়ের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক সুমন বলেন, লজ্জাবতী বানর বিরল একটি প্রাণী। নিশাচর এই প্রাণীগুলো মূলত রাতের আঁধারেই এক গাছ থেকে আরেক গাছে চলাফেরা করে এবং পোকামাকড় ও বিভিন্ন গাছের রস খেয়ে থাকে। বনে খাদ্যের সংকট পড়লে এরা লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় মানুষের নজরে এলে আটক করে খাঁচায় বন্দী করে কিংবা ক্ষতিকারক প্রাণী ভেবে হত্যার চেষ্টা করে।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেওয়ান আলী বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এই এলাকায় প্রায় সময় বানর, অজগরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ধরা পড়ে। আজকেও একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা প্রায় সময় এই প্রাণীগুলো উদ্ধার করে আমাদের সহায়তায় বনে অবমুক্ত করে। এই প্রাণী উদ্ধারের পর উপজেলা সদর ইউনিয়নের গহিন বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। মূলত খাদ্যের সন্ধানেই প্রায় সময় বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে।’