ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় গণপিটুনিতে কৃষক সেজাব আলী নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে সুজন মিয়া বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে ইসলামপুর থানায় মামলাটি করেন।
নিহত সেজাব আলী উপজেলার কুলকান্দী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, জমিসংক্রান্ত এবং শত্রুতার জের ধরে আসামিরা কৃষক সেজাব আলীকে বসতঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কুলকান্দী যমুনা নদীর দুর্গম জিগাতলা গ্রামে বিশেষ অভিযান চালায় ইসলামপুর থানার পুলিশ।
গণপিটুনি দিয়ে তিন ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করে উত্তেজিত জনতা।
পুলিশে সোপর্দ করা ব্যক্তিরা হলো—জিগাতলা গ্রামের সাত্তার মিয়ার ছেলে ইসমাইল, দেলবার আলীর ছেলে সুরমান আলী এবং কৃষক সেজাব আলী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, আট রাউন্ড গুলি এবং একটি ছোরা উদ্ধার করা হয় বলে দাবি পুলিশের।
প্রথমে তাদের ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে সেতাব আলী এবং ইসমাইলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে গভীর রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেজাব আলী মারা যান। এ ছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ইসমাইলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এসব ঘটনায় ইসলামপুর থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপপরিদর্শক (এসআই) শামছুজ্জামান বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে এবং অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছেন।
গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত সেতাব আলীর ছেলে সুজন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘বাবাকে পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে। অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করার কারণেই ডাকাতেরা বাবাকে মেরেছে। এ ছাড়া পুলিশ সময়মতো বাবাকে চিকিৎসা করিয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি। আমাদের কাছে সন্দেহ হচ্ছে, বাবাকে যথাসময়ে হাসপাতালে পাঠায়নি পুলিশ। আমরা ঘটনা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করছি।’
সুজন মিয়া আরও বলেন, ‘বাবাকে হত্যার ঘটনায় ইসলামপুর থানায় মামলা করেছি। শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষরা বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বাবা নিরপরাধ মানুষ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা ছিল না।’
ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, ‘নিহত সেজাব আলীর ছেলে সুজন মিয়া বাদী হয়ে ২৬ জনের নামে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।’
পুলিশের উপস্থিতিতেই সেতাব আলীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।