‘শুক্রবার আমাকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিল আব্বুর। কিন্তু আব্বু ময়মনসিংহ গেলেন ঠিকই, ফিরলেন আমাদের এতিম করে। আমি দোষীদের এমন বিচার চাই, যেন আমার মতো এতিম আর কেউ না হয়।’
জামালপুরের কর্মস্থল থেকে ছুটিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গ্রামের বাড়ি গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামের (৪৫) ছেলে রাফিউল ইসলাম (১৬) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা বলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরদিন ময়মনসিংহের ভাড়া বাসায় ওঠার কথা ছিল শফিকুলের।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত শফিকুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতপরিচয় ছয়জনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হননি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজারে যাওয়ার পথে দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় পান মহালের গলিতে দুষ্কৃতকারীরা কুপিয়ে শফিকুল ইসলামকে গুরুতর আহত করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তিনি মারা যান।
নিহত পুলিশ সদস্যের মা ফাতেমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘বিচার চাই গো, আমি আর কিছু চাই না গো। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
শফিকুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখনো কেউ গ্রেপ্তার হলো না। আমরা খুবই হতাশা।’
স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কখনো এ পরিবারের এমন আচরণ দেখিনি যে তাদের শত্রু থাকবে এলাকায়। আমরা কল্পনা করতে পারিনি এমন একটি ভালো ছেলেকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে। আমরা এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
নোয়াগাঁও গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘এলাকার কারও সঙ্গে কোনো দিন শফিকুলের মনোমালিন্য হয়নি। সে অত্যন্ত সৎ ও ভালো ছেলে ছিল। আমরা শফিকুলের মতো একজন ভালো মানুষকে এলাকা থেকে হারালাম। আমরা চাই, এ খুনের সঠিক তথ্য বের হোক।’
একই এলাকার নিহত পুলিশ শফিকুলের শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সে যখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল, তখন আমি তাকে পড়িয়েছি। আমার জানামতে এলাকায় তার সঙ্গে কারও কোনো ঝগড়া নেই। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই।’
নোয়াগাঁও এলাকার জামাই শামছুল আলম খান বলেন, ‘সবাই আসলে হতবাক একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। সেখানে তো সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। দুর্গাপুরবাসী, এলাকাবাসী ও সকল শান্তপ্রিয় মানুষের দাবি, অতি দ্রুত আসামিদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিহতের গ্রামের বাড়ি যান। সেখানে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জানাজায় অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।