তিন বছর পর নেত্রকোনার মদনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নৌকার সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রী সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পেছনে থেকে ব্যাগ ভর্তি এসব ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের সিল মারা ২০০টি ব্যালট ও ইউপি সদস্য পদের ৬৫টি সিল মারা ব্যালট পেপার রয়েছে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাইম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিল মারা ব্যালট উদ্ধার করে নির্বাচন অফিসে প্রেরণ করেছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নেত্রকোনার মদন উপজেলায় ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাফায়েত উল্লাহ রয়েল নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের দিন বাড়রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন নৌকা প্রতীকে জোরপূর্বক ভোট দেয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন আহতও হয়। ফল প্রকাশের তিন বছর পর সাফায়েত উল্লাহ রয়েলের নৌকা প্রতীকের সিল মারা ২০০ ব্যালট ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার ৬৫ সিল মারা ব্যালট পেপার পায় স্থানীয়রা।
কাইটাইল ইউনিয়নের সুতিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বাড়রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে একটি শপিং ব্যাগ দেখতে পাই। ব্যাগটি হাতে নিয়ে দেখতে পাই সিল মারা ব্যালট পেপার। পরে বিষয়টি প্রশাসনকে জানাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ‘গত নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দেয়। যার প্রমাণ আজ হয় তো মিলেছে।’
ওই নির্বাচনে সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থী বাচ্চু মিয়া জানান, ‘তিন বছর আগেও বিদ্যালয়ের পেছন থেকে আমার ফুটবল প্রতীকের ব্যালট পেপার উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে গেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
জানতে চাইলে মদন উপজেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা হামিদ ইকবাল বলেন, ‘যথারীতি নিয়ম অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যালট পেপার হিসাব করে পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনারা প্রিসাইডিং অফিসারের বক্তব্য নেন।’
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘তিন বছর পূর্বের ঘটনা আমার মনে নেই, আমার কেন্দ্রে এমন কোনো অভিযোগ ছিল না।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়ত হোসেন বলেন, ‘আমি শুনেছি একটি বিদ্যালয়ের পেছন থেকে ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। তা পুলিশের কাছেই আছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘ব্যালট পেপার উদ্ধার করে নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’