জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে বিএনপিতে শুরু হয়েছে ‘দোষারোপের রাজনীতি’। নেতা–কর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়েছেন। একপক্ষ আরেক পক্ষকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করছে। স্বদলীয় প্রতিপক্ষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলাসহ মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব বনাম সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুলের সমর্থকদের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে। উভয় পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে থানা-পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে নুরুল ইসলাম নবাবের সমর্থকেরা ইসলামপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান নেন ইসলামপুর-জামালপুর মহাসড়কের ডেফলা ঘাট এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম পালন করে আসছেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব।
অপর দিকে, একই আসনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিমকে উপস্থাপন করে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল রাজনৈতিক কার্যক্রম পালন করে আসছেন।
বিএনপির এক অংশের নেতা–কর্মী নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুলকে সমর্থন দিচ্ছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবুর হাতে রয়েছে দলটির উপজেলা শাখার অঙ্গসংগঠনের কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইসলামপুর এম এ সামাদ পারভেজ মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটিকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাবের সমর্থকদের সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান বিপুলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও চড়থাপ্পড়ের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সন্ধ্যার আগমুহূর্তে নবাবের সমর্থক পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামের মালিকানাধীন রেলস্টেশন রোডের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
পরদিন বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ওই কলেজ পরিচালনা কমিটিকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছনা ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাবের সমর্থকেরা ধর্মকুড়ার উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে জড় হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরাতন মার্কাজ মসজিদ মোড় এলাকায় নেতা–কর্মীরা পৌঁছা মাত্রই তাঁদের ওপর হামলা চালায় চালানো হয়।
এতে গুরুতর আহত হন উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ বালা, চরপুটিমারী ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. পলাশ। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নেন।
একই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাবকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুলের নেতৃত্বে একটি মিছিল বিক্ষোভ বের হয়। মিছিলটি থানা গেটসংলগ্ন সড়ক থেকে বের করে ইসলামপুর বাজারসহ প্রদক্ষিণ শেষে থানা মোড় বটতলা চত্বরে সমাবেশে যোগ দেন নেতা–কর্মীরা।
পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মাহবুবুল হক, উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক হাতেম আলী সাদা, নবী নেওয়াজ খান লোহানীর সমর্থক জাকিউল ইসলাম তিব্বত, মনির খান লোহানী এবং সাকাওয়াত হোসেন সুজন।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন দমাতে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানোসহ মারধরের অভিযোগে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে আওয়ামী লীগের ৩১ নেতা-কর্মীর নামে ইসলামপুর থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় সোনা মিয়া ফারাজি এবং পিয়াস মিয়া নামে দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ওই দুজনকে বিএনপির কর্মী দাবি করে ৯ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডাকেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান লোহানী।
উল্লেখ্য, বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান লোহানী পক্ষের দুই কর্মী হলেন সোনা ফারাজী ও মো. পিয়াস।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
এর দুই দিন পর সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই দুই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করেন বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম নবাব।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মনোনয়ন বড় বিষয় না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁকে মেনে নেব। তবে দলের নাম ভাঙিয়ে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। একটি পক্ষ দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে।’
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা নিতে আমাদের বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। হীন উদ্দেশ্যে কতিপয় নেতা–কর্মী দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে।’
উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দ্রুত রাজনৈতিক বিরোধ সুরাহা না করা হলে, যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা জরুরি।’
ইসলামপুর থানার (ওসি) মো. সাইফুল্লাহ বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে থানা-পুলিশসহ সেনাবাহিনীর টহল দল মাঠে রয়েছে।