বৃষ্টি জনজীবনে স্বস্তি দিলেও কিছু জায়গায় তৈরি করে দুর্ভোগ। যদিও এর দায় বৃষ্টির নয়, মানুষের। স্বস্তির বৃষ্টি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ও মির্জাপুর ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ৯ গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বাস। বর্ষার এই কয়েক মাস প্রায় ১০ হাজার পরিবারের যাতায়াতে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব গ্রামের বাসিন্দাদের শেরপুর উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর বাজারে যাতায়াত করার প্রধান রাস্তা বৃষ্টি শুরু হলে বর্ষাকালে হাঁটাচলার অনুপযোগী হয়ে ওঠে। এই রাস্তা পাকা করার জন্য এখানকার জনপ্রতিনিধিরা অসংখ্যবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে, বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না।
হাতিগাড়ার, রাজবাড়ী, পেংরাপাড়া, বাগমারা, দড়িমুকুন্দ, খোট্টাপাড়া, কদিমুকুন্দ, ভাদাসপাড়া ও বীরগ্রামের অর্ধশতাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্ষাকালে তাঁরা কার্যত গৃহবন্দী থাকেন। ইচ্ছে করলেই উপজেলা শহর বা পাশের বাজারে যেতে পারেন না। যেতে হলে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। কর্দমাক্ত রাস্তার কারণে কৃষিপণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যাঘাত ঘটে।
এই গ্রামগুলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত হওয়ায় বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামগুলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত হওয়ায় আমরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় সব রাস্তা পাকা করা হয়েছে। আমরা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। বিনিময়ে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। এলাকার কোনো মানুষ গুরুতর অসুস্থ হলে বাঁশ ও কাঠের পাটা বানিয়ে ঘাড়ে করে হাসপাতালে নিতে হয়। আমরা এর অবসান চাই।’
রাজবাড়ী গ্রামের দয়াল তাঁতি (৩২) বলেন, ‘হাতিগাড়া থেকে খোট্টাপাড়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এই এলাকায় প্রধান সড়ক। এটা প্রায় নয়টি গ্রামের মানুষের শেরপুর উপজেলা সদর ও পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর বাজারে যাতায়াত করার প্রধান রাস্তা। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এই রাস্তার কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। বর্ষাকালে যানবাহন চলাচল করা তো দূরের কথা পায়ে চলাচল করা যায় না।’
জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরাও এই জনদুর্ভোগরে অবসান চাই। এ জন্য এক বছর আগে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের তথ্যও সংগ্রহ করছে। আশা করা যায় দ্রুত সময়র মধ্যে রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবে।’
খোট্টাপাড়া গ্রামের দুধ ব্যবসায়ী মো. শামসুল হক বলেন, ‘বর্ষাকালে রাস্তার জন্য গরুর দুধ বাজারে নিতে পারি না। এলাকাতেই কম দামে বিক্রি করতে হয়। এ ছাড়া এক বস্তা ভুসি পরিবহনের জন্য ৫০ টাকা এবং এক বস্তা ধান পরিবহনে জন্য ১৫০ টাকা ব্যয় করতে হয়। এরপরও সেই ভ্যানগাড়ি কয়েকজন মিলে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়।’
বর্ষাকালে বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই কাটাতে হয় বলে জানান ওই সব গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী। বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা কানাই কন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনো পাকা রাস্তা নেই। বর্ষায় সময় কাদার কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি চলে না। তাই আমরা স্কুলে যেতে পারি না।’
উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বলেন, প্রধান সড়কটি এলজিইডির আইডিভুক্ত হয়ে থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কোনো প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। তা না হলে উপজেলার অর্থায়নে ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী ভূমি কমিশনার এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘যেহেতু রাস্তার কারণে এই এলাকার লোকজন অনেক কষ্টে আছে, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’